পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২২৯

তাঁহারা বাঙ্গালী ব্রাহ্মণদের মত ভোজন করিতে করিতে উচ্ছিষ্ট-দ্রব্য বস্ত্রে বন্ধন করেন নাই। ইঁহারা ভোজনের সময় গ্রাসকালে একবার সকলে চীৎকার করিয়া, সঙ্গীতের ন্যায় শ্রুতি-সুখকর বেদপাঠ করিয়া ভোজনে প্রবৃত্ত হইলেন; তৎপরে আর কাহাকেও কথা কহিতে দেখা যায় নাই। আমাদের দেশীয় ব্রাহ্মণ-ভোজনের সময় যেরূপ গোলযোগ হয়, এখানে সে গোলের সম্পর্ক নাই, পাতে কেহ কোন দ্রব্য ফেলেন নাই, সকলেরই পাত পরিষ্কার; ইহা দেখিয়া দাদা পরম আহলাদিত হইলেন। তাঁহারা ভোজনান্তে আচমন করিয়া, পান ও দক্ষিণাগ্রহণ-সময়ে কৃতিকে বেদপাঠ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিয়া থাকেন। আমরা যেরূপ দক্ষিণা দিতাম, দাদা তদপেক্ষা অধিক দক্ষিণার ব্যবস্থা করিয়া বলিলেন, “আগামী বৈশাখমাসে মাতৃশ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণভোজনের সময়ে কাশী আসিব।”

 মৃত মদনমোহন তর্কালঙ্কার, দাদার বাল্যবন্ধু ও সহাধ্যায়ী ছিলেন। এজন্য তাঁহার জননী বিশ্বেশ্বরী-দেবীকে তিনি মাতৃ-সম্বোধন করিতেন। তর্কলঙ্কারের পত্নীর সহিত তাঁহার মনের মিল হইত না; সুতরাং সর্ব্বদা বিবাদ হইত। একারণ, তর্কালঙ্কারের জননী, কলিকাতায় বাবু রাজকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের ভবনে আসিয়া, দাদার নিকট রোদন করেন। তিনি তাঁহাকে অতি শীর্ণকায়া দেখিয়া অত্যন্ত দুঃখিত হইয়া বলিলেন, “মা! তোমার উপযুক্ত সন্তান লোকান্তরিত হইয়াছেন; এক্ষণে আপনার বধুর সহিত যেরূপ অসদ্ভাব দেখিতেছি, তাহাতে আপনার উহার সংস্রবে থাকা বিধেয় নহে; আমি আপনার জীবদ্দশায় মাসিক দশ টাকা দিতে পারি, আপনি কাশীতে অবস্থিতি করুন।” ইহা শুনিয়া তর্কালঙ্কারের জননী বিশ্বেশ্বরী-দেবী আহলাদিত হইয়া, স্বতন্ত্র পাথেয় গ্রহণ-পূর্ব্বক কাশীবাস করিলেন। তথায় থাকিয়া সবলকায় হইলেন এবং দশ বৎসর পরে পুনরায় দাদার নিকট অতিরিক্ত টাকা লইয়া কথকতা দিয়াছিলেন। তথায় ১৮ বৎসর থাকিয়া, তর্কালঙ্কারের জননী কাশীলাভ করেন।

 ভূতপূর্ব্ব সংস্কৃত-কলেজের স্মৃতি-শাস্ত্রাধ্যাপক ভারতচন্দ্র শিরোমণি মহা-