পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২৩১

জননী-দেবীর অনুরোধে, পিতৃদেবের পিতৃঘসার দুহিতা নিস্তারিণী-দেবীকে মাসিক ৪৲ টাকার ব্যবস্থা করেন। ইনি প্রায় ত্রয়োদশবর্ষ টাকা পাইয়া কাশীপ্রাপ্ত হন।

 পিতৃদেবের পুরোহিত রামমাণিক্য তর্কালঙ্কার মহাশয়কে মাসিক ১০৲ টাকার ব্যবস্থা করিয়া, পরে অথর্ব হইলে আর ৫৲ টাকা বৃদ্ধি করিয়া দেন। ইনি প্রায় পনর বৎসর টাকা পাইয়া, ইহলোক হইতে পরলোকে গমন করেন।

 পিতৃদেবের বেদপাঠী পুরোহিত চিন্তামণি ভট্টকে মাসিক ৩৲ টাকা মাসহরা দিতেন। এইরূপ অনেকের মাসহরার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।

 দাদা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য পদব্রজে প্রত্যহ প্রাতে ও সায়ংকালে প্রায় দুই ক্রোশ ভ্রমণ করিতেন। ভ্রমণ করিতে যাইবার সময় সঙ্গে ২০।২২ টাকার সিকি, দুয়ানি ও আধুলি লইতেন। পথে অনাথ, কুষ্ঠরোগী, কাণা, খঞ্জ, কালা, রুগ্ন দেখিলেই অবস্থানুসারে দান করিতেন। বাসায় যে সকল বৃদ্ধ ও দীন ব্যক্তি এবং যে সকল বৃদ্ধ ও ভদ্রকুলাঙ্গনা সাক্ষাৎ করিতে আসিয়া কষ্টের কথা আবেদন করিতেন, তাহাদের প্রত্যেককে ২৲ টাকা এবং এক এক জোড়া বস্ত্র প্রদান করিতেন। যে কয়েক দিবস কাশীতে অবস্থিতি করিতেন, প্রাতে পিতৃদেবের পাকাদিকার্য্য স্বহস্তে নির্ব্বাহ করিতেন। বাল্যকালে দাদা স্বয়ং পাকাদি-কার্য্য নির্ব্বাহ করিয়া লেখাপড়া শিক্ষা করিতেন; বাল্যকালের অভ্যাস অদ্যাপি বিস্মৃত হইতে পারেন নাই। কাশীতেও পাকাদি-কার্য্য সমাধা করিয়া, পিতৃদেবের ভোজনান্তে পিতার উচ্ছিষ্ট পাত্রে প্রসাদ পাইতেন। ভোজনান্তে আমি পিতৃদেবকে মহাভারত শ্রবণ করাইতাম। কিন্তু দাদা যে কয়েক দিবস থাকিতেন, সেই কয়েক দিবস তিনি স্বয়ং মহাভারত শুনাইতেন। সন্ধ্যার পর দাদা, পিতৃদেবের প্রমুখাৎ পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ প্রভৃতির রীতিনীতি ও গল্প শ্রবণ করিতেন। ইহা সাধারণের নিকট প্রকাশ করিবার মানসে আমায় আদেশ করেন যে, পিতৃদেব সম্পূর্ণ সুস্থ হইলে তুমি পূৰ্বপুরুষগণের নাম, ধাম, আচার, ব্যবহার, রীতি, নীতি প্রভৃতি অবগত হইয়া, আমায়