পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

লিখিয়া পাঠাইবে। নানা কার্য্যে ব্যাপৃত থাকায়, অগত্যা উহাঁকে কলিকাতায় যাইতে হইত; তথায় যাইয়া নিশ্চিন্ত থাকিতে পারিতেন না। পিতৃদেব আনারস, চালতা, ছোট উচ্ছে, প্রভৃতি যে সমস্ত দ্রব্য ভাল বাসিতেন, কাশীতে ঐ সকল দ্রব্য দুষ্প্রাপ্য বলিয়া, দাদা সময়ে সময়ে কলিকাতা হইতে ঐ সমস্ত দ্রব্য পাঠাইতেন।

 সন ১২৮১ সালের অগ্রহায়ণ মাসে অগ্রজ মহাশয়, উদরাময় ও শিরঃপীড়ায় অত্যন্ত ক্লেশানুভব করেন। সেই সময়ে স্বাস্থ্য-রক্ষার জন্য কাণপুরে গঙ্গাতীরে বাটী ভাড়া লইয়া অবস্থিতি করেন। তথায় কয়েক মাস অবস্থিতি করিয়া, সম্পূর্ণরূপ আরোগ্যলাভ করেন এবং তথা হইতে লক্ষ্মৌ সহরে গমন করেন। তথায় বাবু রাজকুমার সর্ব্বধিকারী মহাশয়ের বাসায় কয়েক দিন যাপন করিয়া, প্রয়াগে গমন করেন; তথায় কতিপয় দিবস অতিবাহিত করিয়া, চৈত্র মাসের শেষে, বাবু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুইটি পুত্রসহ কাশীধামে প্রত্যাগমন করেন। দাদা, কাশীতে যখন থাকিতেন, প্রায়ই স্বয়ং দশাশ্বমেধের ঘাটে বাজার করিতে যাইতেন। তজ্জন্য অনেকে বলিতেন, “চাকর দ্বারা যে কাজ সমাধা হইবে, তাহা স্বয়ং সমাধা করিতে লজ্জা বোধ হয় না? এরূপ দেখিয়া আমাদিগের লজ্জা বোধ হয়।” দাদা বলিতেন, “তবে আপনার পথে আমার সহিত সাক্ষাৎ করিবেন না। পিতার জন্য বাজার করিতে আসিয়াছি, ইহাতে আমি পরম সন্তোষলাভ করিয়া থাকি। যাঁহারা না পারেন, তাঁহারা চাকরের দ্বারাই এ সকল কাজ করিয়া থাকেন। আমি বিষয়কর্ম্মে লিপ্ত না থাকিলে, এখানে নিরন্তর থাকিয়া পিতার চরণ-সেবা করিয়া, আপনাকে চরিতার্থ জ্ঞান করিতাম।”

 সন ১২৮১ সালের বৈশাখ মাসে জননীদেবীর একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধোপলক্ষে মহারাষ্ট্রীয় বেদপাঠী ব্রাহ্মণদিগকে নিমন্ত্রণ করা হয়। নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণেরা সমাগত হইলে, কৃতীকে স্বয়ং ব্রাহ্মণদিগের পাদপ্রক্ষালন করিয়া দিবার প্রথা থাকায়, আমি ঐ কার্য্য সমাধা করিতে প্রবৃত্ত হইলাম। দাদা, ইহা দেখিয়া