পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

আপনার বিরোধ মীমাংসা হইলে আমি পরম সুখী হইব।” ইহা শুনিয়া দাদা উত্তর করিলেন, “কাশীর ভিক্ষুক, প্রতারক ব্রাহ্মণদের সহিত আমাকে কি নিম্পত্তি করিতে হইবে? পিতৃদেব এখানে বাস করিবার মানসে আগমন করেন নাই, এখানে মৃত্যু-কামনায় আসিয়াছেন। কাশীস্থ দল-সংক্রান্ত ব্রাহ্মণেরা আমায় ভয় দেখাইয়া প্রচুর অর্থ চাহেন; তাহা না দেওয়াতে ভয় দেখাইয়া আমায় জব্দ করিবেন বলিয়া থাকেন। পুরোহিত মাতঙ্গীপদ ন্যায়রত্নকে ভয় দেখাইয়া ত্যাগ করাইয়াছেন। একারণ, রামমাণিক্য তর্কালঙ্কার মহাশয়কে পুরোহিত নিযুক্ত করা হইয়াছে। কাশীর দুর্বৃত্তগণকে আমি ভালরূপ চিনি, ইহাঁরা কাশীতে সমাগত ব্যক্তিদিগকে যথেচ্ছরূপে উৎপীড়ন করিয়া থাকেন। কিন্তু উহাঁরা যাহাই করুন না কেন, আমি কাহারও অনিষ্ট করিব না। এক্ষণে তাঁহারা যদি স্বীকার করেন যে, আমরা অন্যায় কার্য্যগুলি করিব না, তাহা হইলে তাঁহাদের সহিত আমার নিম্পত্তি হইবে। আর তাঁহাদের সহিত আমার কি সম্পর্ক; আমি দান করিব, তাঁহারা গ্রহণ করিবেন, এই সম্পর্ক। এখানে পিতৃদেব, কার্য্যোপলক্ষে মহারাষ্ট্ৰীয় বেদপাঠী ব্রাহ্মণদিগকে নিমন্ত্রণ করিযা থাকেন, ইহাঁদের আচার-ব্যবহার দেখিয়া আমার শ্রদ্ধা ও ভক্তি জন্মিয়াছে; কিন্তু আমাদের বাঙ্গালা হইতে যে সকল বাঙ্গালী-ব্রাহ্মণ কাশীবাস করিতেছেন, তন্মধ্যে অনেকেই দুষ্ক্রিয়াসক্ত, ধর্ম্মাধর্ম্মজ্ঞানশূন্য ও মুর্থ। শাস্ত্রজ্ঞ মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণগণ থাকিতে, ইহাদিগের প্রতি কেন আমার শ্রদ্ধা ও ভক্তি জন্মিবে?”

 অগ্রজ মহাশয় এক দিবস কথাপ্রসঙ্গে পিতৃদেব মহাশয়কে বলেন, “এতাবৎ কাল ভাড়াটিয়া বাটীতে কলিকাতায় অবস্থিতি করিতেছি; কলিকাতায় বাটী না করিবার তাৎপর্য্য এই যে, যদি বীরসিংহ জন্মভূমি বিস্মৃত হই। এক্ষণে কলিকাতায় নিজের বাটী না করিলে, সময়ে সময়ে এই এক মহৎ কষ্ট হয় যে, কতকগুলি পুস্তকের সেলফ আছে, মধ্যে মধ্যে এক বাটী হইতে অপর বাটীতে লইয়া যাইতে অনেক ক্ষতি হইয়া থাকে; ইত্যাদি কারণে স্থান ক্রয়