পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করায়, তাঁহার সহিত মনান্তর হয়। এই কারণে শিক্ষা-বিভাগে আমার পুস্তকের বিক্রয় কমিয়া যাওয়ায়, আয়ের অনেক হ্রাস হইয়াছে।”

 এক দিন কথাপ্রসঙ্গে পিতৃদেব মহাশয় ব্যক্ত করেন, “তোমার প্রতি বালাকালে আমি সামান্য ব্যয় করিয়াছি; কিন্তু তুমি আমার জন্য বহুব্যয় করিতেছ, তজ্জন্য আমি মানসিক সুখানুভব করিয়া থাকি। কোন বিষয়ে আমার কোন কষ্ট নাই। তুমি আমার বংশে রাম-অবতার হইয়াছ বলিলেও অত্যুক্তি হয় না; তুমি ধর্ম্মশীল, সত্যপরায়ণ, পিতৃভক্তি-পরায়ণ; কেবল আমার মনে কখন কখন সামান্য একটু কষ্টানুভব হইয়া থাকে।” ইহা শুনিয়া দাদা বলিলেন, “কি, তাহা ব্যক্ত করুন। সাধ্য হয়, অবশ্য তাহা সম্পাদনা করিতে ক্রটা করিব না।” পরে পিতৃদেব বলেন, “তোমার কনিষ্ঠ সহোদর ঈশান, পড়াশুনা ত্যাগ করিয়া বনে বনে পরিভ্রমণ করিয়া থাকে, এই আমার আন্তরিক দুঃখের কারণ; তাহাকে ও তাহার পত্নীকে এখানে পাঠাইতে পারিলে, আমি পরম সুখী হইব।” ইহা শুনিয়া অগ্রজ বলিলেন, “আমি যাইয়া তাহাকে পত্র লিখিয়া কলিকাতায় আনাইয়া পাঠাইবার চেষ্টা করিব, আপনিও তাহাকে এখান হইতে পত্র লিখুন।” পরে পিতৃদেব বলিলেন, “শুনিতে পাই, তাহার অনেক ঋণ আছে, তাহা পরিশোধ করিয়া পাঠাইবে।” এই কথা শুনিয়া দাদা বলিলেন, “ইতিপূর্বে একবার তাহার যথেষ্ট ঋণ পরিশোধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। তৎকালে তাহাকে কোন কর্ম্মের ভার দিব বলিয়াছিলাম; সে কোন কর্ম্মে লিপ্ত থাকিতে ইচ্ছা করে নাই।” অতঃপর অগ্রজ মহাশয়, কয়েক দিবস কাশীতে অবস্থিতি করিয়া কর্ম্মাটারে প্রত্যাগমন করেন, তথায় ৮।১০ দিন থাকিয়া কলিকাতায় গমন করেন।

 সন ১২৮২ সালের ৩০ শে আষাঢ় মঙ্গলবার অগ্রজ মহাশয়ের তৃতীয়া কন্যা বিনোদিনী-দেবীর বিবাহ হয়। বর, বাবু সূর্য্যকুমার অধিকারী। ইনি একুশ বৎসর বয়সের সময় হেয়ার-স্কুলের শিক্ষকতাকার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন। বিবাহের পর অগ্রজ-মহাশয়, সুর্য্যবাবুকে ঐ পদ পুরিত্যাগ করাইয়া, মেট্রোপলিটানে