পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

দিবস তথায় থাকিয়া দেখিলাম, তিনি তখনও সম্পূর্ণরূপ সবলকায় হইতে পারেন নাই। তিনি প্রাতঃকাল হইতে বেলা দশ ঘটিকা পর্য্যন্ত, সাঁওতালরোগীদিগকে হোমিওপ্যাথি-মতে চিকিৎসা করিতেন এবং পথ্যের জন্য সাগু, বাতাসা, মিছারী প্রভৃতি নিজ হইতে প্রদান করিতেন। আহারাদির পর বাগানের গাছ পর্য্যবেক্ষণ করিতেন; আবশ্যকমতে এক স্থানের চারাগাছ তুলাইয়া অন্য স্থানে বসাইতেন। পরে পুস্তক-রচনায় মনোনিবেশ করিতেন। অপরাহ্নে পীড়িত সাঁওতালদের পর্ণ-কুটীরে যাইয়া তত্ত্বাবধান করিতেন। তাহাদের কুটীরে যাইলে, তাহারা সমাদরপূর্ব্বক বলিত, “তুই আসেছিস।” তাহাদের কথা অগ্রজকে বড় ভাল লাগিত। আমায় তৎকালে বলেন, “বড়লোকের বাটীতে যাওয়া অপেক্ষা, এ সকল লোকের কুটীরে যাইতে আমায় ভাল লাগে; ইহাদের স্বভাব ভাল, ইহারা কখনও মিথ্যাকথা বলে না, ইত্যাদি কারণে এখানে থাকিতে ভাল বাসি।” পরে আমায় বলেন যে, “বীরসিংহ-বিদ্যালয় দেশব্যাপক ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রাদুর্ভাবপ্রযুক্ত কিছুদিনের জন্য বন্ধ হইয়াছে।” আমি তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করায় উত্তর করিলেন, “ম্যালেরিয়া-জ্বরনিবন্ধন বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের মৃত্যু হইয়াছে দেখিয়া, ভয়প্রযুক্ত হেডমাষ্টার বাবু উমাচরণ ঘোষ রিপোর্ট দেন যে, তিন শত ছাত্রের মধ্যে কোন দিন দুই জন, কোন দিন তিন জন উপস্থিত হয়; উহারা ক্ষণেককাল বেঞ্চে বসিয়া জ্বরে কাঁপিতে কাঁপিতে শয়ন করে। এরূপ অবস্থায় এত অধিক ব্যয় করিয়া বিদ্যালয় রাখা যুক্তি-সঙ্গত নহে। এ অবস্থায় কোন শিক্ষকই তথায় যাইতে সম্মত নন; সকলেই ভয়ে ব্যাকুল। হেড্ মাষ্টার ও দ্বিতীয় মাষ্টার রোগে আক্রান্ত হইয়া চিকিৎসার মানসে কলিকাতায় আসিয়াছেন। তাহাদিগকে পুনর্ব্বার যাইতে অনুরোধ করিলেও তাহারা ভয়ে যাইতে সাহস করেন নাই, সুতরাং যতদিন ম্যালেরিয়া থাকিবে, অগত্যা ততদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকিবে।”

 কর্ম্মটারে অগ্রজ মহাশয়কে কিছু সুস্থ দেখিয়া, আমি দেশে গমন করিলাম।