পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২৪৫

বাদীর পক্ষ হইয়া, আমাদিগকে দণ্ড দেওয়াইবার জন্য অশেষ প্রয়াস পাইয়াও কৃতকার্য্য হন নাই। পিতামহীদেবী সাধারণ গোমনুষ্যদিগকে ছায়াদানমানসে অশ্বখ-বৃক্ষ ও তত্তলীয় ভূমি ক্রয় করিয়া, শাস্ত্রানুসারে যে প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন তাহা প্রকাশ পাইল; সুতরাং আমরা মিথ্যাভিযোগ হইতে অব্যাহতি পাইলাম।

 কয়েক মাস পরে ঐ নবকুমারের পত্নী কলিকাতায় দাদার নিকট আগমন করিয়া বলিলেন, “আপনি অনেক ব্যক্তিকে মাসহরা দিতেছেন, আমাকে ত কিছুই দিতে হয় না। অতএব আপনি অনুগ্রহপূর্ব্বক আমাদের চাপড়ার পাড়ে আপনার পিতামহীর প্রতিষ্ঠিত অশ্বখ-বৃক্ষটি আমাকে প্রদান করুন। উহা বহুকালের গাছ; ঐ অশ্বখ-বৃক্ষের নিকট আমরা প্রায় নয় দশ বৎসর বাগান করিয়াছি। ঐ গাছের আওতায় আমার বাগানের অনিষ্ট ঘটিতেছে।” তাহাতে দাদা বলেন, “আমার পিতামহী পঞ্চাশ বৎসরেরও অধিক পূর্ব্বে ঐ বৃক্ষ ও তত্তলস্থ ভূমি রীতিমত টাকা দিয়া ক্রয় করিয়া, পথিকগণের আতপতাপনিবারণ-মানসে প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। আর যিনি ঐ স্থান পিতামহীদেবীকে বিক্রয় করিয়াছেন, পিতৃদেব তাহার পরিবারকে প্রতিপালন করিয়াছেন। বাবার কাশী যাইবার পর, তাহার অনুরোধে আমিও তাহার বৃদ্ধ পরিবার প্রসন্নময়ীদেবীকে মাসে মাসে ২৲ টাকা দিয়া থাকি। তোমার স্বামী জানিয়া শুনিয়া, পিতামহীর ঐ স্থান কেন ক্রয় করিয়াছে?” তাহা শুনিয়া ঐ স্ত্রীলোকটি বলিলেন, “আমার স্বামীকে আপনি লেখাপড়া শিখাইয়া কর্ম্ম করিয়া দিয়াছিলেন, তাহাতেই তিনি আট দশ বৎসর অতীত হইল, ঐ স্থান ক্রয় করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।”

 ইহা শুনিয়া দাদা বলিলেন, “তোমার স্বামী নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি নিজ-ব্যয়ে লেখা পড়া শিখাইয়া, পরে কলিকাতাস্থ মেডিকেল কলেজে পড়াইয়াছিলাম; পরে সে নারাজোলের রাজার ডাক্তার হইয়া, হস্তিপৃষ্ঠে বীরসিংহায় আসিয়া, আমার পিতামহীর প্রতিষ্ঠিত অশ্বখ-বৃক্ষের কতকগুলি