পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

ডাল হাতীর দ্বারা ভাঙ্গাইলেন, এই ঘটনার পূর্বে আমার মৃত্যু হইলে সৌভাগ্য জ্ঞান করিতাম। পিতামহীর গাছের শাখা না কাটিয়া, আমার হাত-পা কাটিলে এত দুঃখ হইত না; পরে আবার উহার মূলে করাত লাগাইলেন এবং তুমি তাহার উপযুক্ত পত্নী, ঐ বৃক্ষে বেড়া দিয়া, বৃক্ষ নষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে উহার শিকড় কাটিয়া বাঁশবৃক্ষাদি রোপণ করিয়াছ, এবং আমার ভাইকে কয়েদ দিবার জন্য বিধিমতে প্রয়াস পাইয়াছিলে; এক্ষণে আবার আমার নিকট আসিয়া উদারতা ও সরলভাব দেখাইতেছ। তুমি মোকদ্দমায় জয়লাভ করিলে কখনই আসিতে না; পরাজয় হইয়াছে, তজ্জন্যই আসিয়াছ। আমার ভাই যদি অন্যায় করিয়াছিল, তাহা হইলে নালিস না করিয়া পূর্ব্ব কেন আমায় জানাইলে না?” ইহা শুনিয়া ঐ ডাক্তারের পত্নী বলিলেন, “ঐ গাছের তলায় আপনাকে কতখানি ভূমি চাই, তাহা আপনি আমার নিকট চাহিয়া লউন।” এই কথায় দাদা বলিলেন, “তুমি আমার নবাবের বেটি, আমি তোমার নিকট ভিক্ষা চাহি না। আমার হয় আমার থাকিবে, নতুবা যাইবে; তজ্জন্য তোমার নিকট আমি ভিক্ষা চাহিব না।” ঐ স্ত্রীলোকটী কয়েক দিন অগ্রজের বাটীতে অবস্থিতি করিয়া, পরে তাঁহার নিকট পাথেয় বস্ত্রাদি লইয়া প্রস্থান করেন।

 ১২৯৬ সালের প্রারম্ভে বীরসিংহা ও তৎসন্নিহিত, গ্রামবাসী, অগ্রজ মহাশয়ের প্রতিপালিত কয়েক ব্যক্তির উত্তেজনায়, নবকুমার ডাক্তারের জামাতা কেশবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় আমাদের নামে দেওয়ানীতে নালিস করে; পরে ক্রমশঃ দাদা ভিন্ন আমাদের পিতামহীর পৌত্র-প্রপৌত্রাদির নামে অভিযোগ হইলে, আমি দেশ হইতে কলিকাতায় আসিয়া দাদাকে সমস্ত অবগত করিয়া বলিলাম, “মহাশয়, আমি ঐ মোকদ্দমায় লিপ্ত থাকিতে ইচ্ছা করি না; অনেকে বলেন, পিতামহী প্রায় ৩৫ বৎসর অতীত হইল গঙ্গা-লাভ করিয়াছেন, তাহার অশ্বখ-বৃক্ষের জন্য মনান্তর করা উচিত নয়। কেহ কেহ বলেন, গাছটি ত্যাগ কর; এক সামান্য অশ্বখ-বৃক্ষের জন্য এত ব্যয় করার আবশ্যক