পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

 বৈষ্ণবচরণ সরকার প্রভৃতি কয়েক সরীকের বসতবাটী দেন-ডক্রীতে বিক্রয় হইবার উপক্রমকালে, তাহাদিগকেও ঐরূপে উদ্ধার করিয়াছিলেন। সে সময় উহাদের এরূপ দুরবস্থা হইয়াছিল যে, কেহই তাহাদিগকে বিশ্বাস করিয়া কিছু মাত্র ধার দেয় নাই; তজ্জন্য উহারা দাদার শরণাগত হওয়াতে, তিনি দয়ার বশবর্ত্তী হইয়া, নিজহস্তে টাকা না থাকা প্রযুক্ত, তাঁহার এক পরম বন্ধুর নিকট হইতে ৮০০৲ শত টাকা ধার করিয়া, মহাজনকে দিয়া উহাদিগের বসতবাটী রক্ষা করেন।

 উত্তরপাড়ায় গাড়ী হইতে পতনের দোষে দাদা, যকৃতে আঘাতপ্রাপ্ত হন; এই সূত্রে উদরাময় পীড়ার সূত্রপাত হয়। ১২৯১ সালের বৈশাখ মাস হইতে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত পীড়া এত দূর প্রবল হয় যে, তাহাতে দাদার জীবন-সংশয় হয়। চিকিৎসক মহাশয়দের অভিপ্রায়ে আফিং খাইতে আরম্ভ করেন। প্রত্যহ প্রাতে ও সন্ধ্যায় ৩০ ফোঁট লডেনম ব্যবহার করিতে লাগিলেন, ইহাতে ত্বরায় ঐ পীড়ার উপশম হইল; কিন্তু দুই তিন মাস পরে পুনর্বার পীড়ার উদয় হইল। আফিংয়ের মাত্রায় উপকার না হওয়ায়, আফিং পরিত্যাগ করিবেন বলিয়া স্থির করিলেন; কিন্তু কোন মতেই ত্যাগ করিতে পারিলেন না।

 সন ১২৯৫ সালের শ্রাবণ মাসে তাঁহার পত্নী দিনময়ীদেবীর রক্তাতিসার পীড়ার উদয় হয়। দিন দিন পীড়ার বৃদ্ধি হইতে লাগিল; চিকিৎসার দ্বারা কোন ফললাভ না হওয়ায়, ভাদ্র মাসের ১লা বৃহস্পতিবার রাত্রি নয়টার সময় পতিপুত্র প্রভৃতি সমুদায় পরিবারবর্গের সমক্ষে কলেবর পরিত্যাগ করিলেন। দাদা, শোকে অধীর হইয়াও স্বীয় ধৈর্য্য ও গাম্ভীর্য্যগুণে শোকদুঃখাদি প্রকাশ না করিয়া, একমাত্র পুত্র নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা তাঁহার ঔর্দ্ধদৈহিকাদি কার্য্য সমাধার পর, কলিকাতায় শ্রাদ্ধ-ক্রিয়া সমাধা করিলেন। ঐ বৎসর পৌষমাসে পুত্রের হাতে খরচপত্র দিয়া, দেশে আত্মীয় বন্ধুবান্ধবদিগের ভোজন ও সম্বৰ্দ্ধনাদি-কার্য্য করিবার জন্য বীরসিংহায় পাঠাইয়াছিলেন।