পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিয়াছিলেন। তাহা শুনিয়া চিন্তামণি বাবুকে পত্র দ্বারা ডাকাইয়া বলেন, “তোমাদের দ্বারা বিদ্যালয়ের কার্য্য সম্পন্ন হইবে না, অতএব তোমাদের বেতনাদি গ্রহণ কর। বিদ্যালয় বন্ধ থাকিবে, আমি স্বতন্ত্র বন্দোবস্ত করিব।” সুতরাং চিন্তামণি হতাশ হইয়া বাটী প্রতিগমন করেন। এই সংবাদ শুনিয়া, আমি আষাঢ় মাসে দাদার সহিত সাক্ষাৎ করিতে কলিকাতা গিয়াছিলাম; তাহাতে তিনি আমাকে বলেন, “তুমি যদি ভার গ্রহণ কর, তাহা হইলে স্কুল রাখিব, নিচেৎ তুলিয়া দিব।” ইহা শুনিয়া অগত্যা ভার গ্রহণ করিয়া, বাটী আগমন করিলাম। পুনরায় শ্রাবণমাসে কলিকাতায় গমন করিলে, আর পাঁচজন শিক্ষক নিযুক্ত করেন। বালকগণের বেতন ও য়্যাডমিসন ফি না থাকায় এবং সুশৃঙ্খলা স্থাপন হওয়ায়, দিন দিন ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। শিক্ষকগণসহ আসিবার সময় কতকগুলি বেঞ্চ ও চেয়ার আমার সমভিব্যাহারে পাঠাইয়া দেন এবং বিদ্যালয়-সম্বন্ধে তাঁহার কৃত নিয়মাবলীও স্বাক্ষর করিয়া, আমার হস্তে প্রদান করেন। ইহা দেখিয়া ঘাঁটাল, জাড়া, ক্ষীরপাই, ঈড়পালা প্রভৃতি স্থানের বিদ্যালয় সকলের কর্তৃপক্ষগণ এবং ঘাঁটাল মুনসেফী আদালতের অনেকগুলি উকীল, ঈর্য্যাপরবশ হইয়া কল-কৌশলে ঐ বিদ্যালয় উঠাইবার মানসে অগ্রজকে অনেক পত্র লিখেন। কিন্তু তিনি ঐ সকল অসম্বন্ধ-পত্র দেখিয়া, কিঞ্চিম্মাত্র ক্ষুব্ধ বা অসন্তুষ্ট না হইয়া, আমাকে দেশে পত্র লিখেন ও কলিকাতায় তাঁহার নিকটে আসিলে ঐ সকল পত্রগুলি আমাকে দেখাইয়া বলেন, “শঙ্কু, এই সকল কারণে তুমি ক্ষুব্ধ বা নিরুৎসাহ হইও না। আমি এই সকল অজ্ঞ ও ঈর্যাপরবশ ব্যক্তিদিগের কথায় কর্ণপাত করি না। আমি পুর্ব্বে বীরসিংহ-বিদ্যালয় স্থাপন করিলে, যেরূপ দেশের উন্নতি-সাধন জন্য যত্ন করিয়াছিলে, এক্ষণেও সেইরূপ যত্ন করিতে ত্রুটি করিও ना। আমার অভিপ্রায়, আমি ব্যয় করিতে কুণ্ঠিত হইব না। আমি টাকা মাত্র দিব, কিন্তু তুমি অন্য সকল বিষয়ে সর্ব্বেসর্ব্বা অর্থাৎ শিক্ষক-নিয়োগ ও পদচ্যুতি বিষয়ে তুমি যাহা করিবে, আমি তাহাতেই সম্মত