পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

হওয়ায়, তাহাদের রীতিমত তত্ত্বাবধান করিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে কলিকাতায় বাদুড়বাগানের বাটীতে আত্মীয় কুটুম্ব ও কুটুম্বদিগের গ্রামবাসীরা এবং বীরসিংহা ও তৎসন্নিহিত কয়েকটী গ্রামবাসী কতকগুলি লোক অৰ্দ্ধোদয়যোগ উপলক্ষে আসিয়া অবস্থিতি করিতেছিল। দাদার প্রতীক্ষা করিয়া, তাহারা বাদুড়বাগানের বাটী হইতে না যাওয়ায়, দাদার কনিষ্ঠ জামাতা কার্ত্তিকচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ফরাসডাঙ্গায় ঐ মর্ম্মে পত্র লিখেন। এই সংবাদ পাইয়া অগ্রজ, ফরাসডাঙ্গার বাটীস্থিত আগত আত্মীয়াদিগকে বিদায় দিয়া কলিকাতায় আসিলেন। বহু লোকের সমাগম দেখিয়া আমি বলিলাম, “অৰ্দ্ধোদয় না হইয়া আপনার পূর্ণোদয় হইয়াছে।” এই কথায় তিনি ঈষৎ হাস্য করিলেন। পাথেয় ও বস্ত্র দিয়া অধিকাংশ লোককে বিদায় করিলেন। দেশস্থ বিদ্যালয়ের আপিলেসন-সম্বন্ধে আমাকে আপন নামে দরখাস্তাদি দাখিল করিতে আদেশ করেন; কিন্তু আমি তাহাতে সন্মত না হইয়া, দাদাকে অনুরোধ করায়, দাদা স্বীয় নামে দরখাস্তাদি লিখাইয়া, তাহার প্রিয়পাত্র মেট্ৰপলিটান বিদ্যালয়ের কর্ম্মচারী বাবু ব্রজনাথ দের দ্বারা স্কুল-ইনস্পেক্টরের নিকট প্রেরণ করেন। বিদ্যালয়ের মোহর ও নাম-কারণের উল্লেখ হওয়ায়, আমাকে নিজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করিতে বলেন। আমি উহা বিদ্যাসাগর ইনসটিটিউসন বলিয়া লিখিলাম। দাদা তাহা দেখিয়া বলিলেন, “আমি তোমা অপেক্ষা ভাল লিখিতে পারি।” এই বলিয়া “ভগবতী-বিদ্যালয়” এই নামটি লিখিয়া, আমাকে ও উপস্থিত ব্রজবাবু প্রভৃতিকে বলিলেন, “শাস্তুর অপেক্ষা আমার লেখাটি ভাল হইল কি না?” আমি বলিলাম, “মহাশয়! লেখা ভাল হইলে কি হইবে, উহাতে অনেক দোষ আছে; বিদ্যালয়টি আপনার নামে থাকিয়া কোন কারণে উঠিয়া গেলে, আপনার পুত্রের উপর দোষ বর্ত্তিবে; কিন্তু জননী-দেবীর নামে হইয়া উঠিয়া গেলে, লোকে বলিবে, বিদ্যাসাগর এমনি কুলাঙ্গার যে, মাতৃদেবীর কীর্ত্তি লোপ করিল।” দাদা বলিলেন, “আমি কি ইহার বন্দোবস্ত না করিব। তুমি ঐ সকল বিষয়ের জন্য দেশে একত্র, আট বিঘা জমী স্থির করিয়া দাও,