পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৫৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কলিকাতায় অবস্থিতি করাও চলিতেছে না; এমত অবস্থায় গঙ্গাতীরে ফরাসডাঙ্গায় দুইটী বাটী ভাড়া লইয়া ও নিত্য-ব্যবহারোপযোগী দ্রব্যসামগ্রী লইয়া, তথায় গমন করেন। মধ্যে মধ্যে মেট্ৰপলিটানের ও অন্যান্য বিষয়-কর্ম্মের জন্য কলিকাতায় আসিতে হইত। প্রথম মাসে কিঞ্চিৎ স্বাস্থ্য লাভ করিলেন; কিন্তু কন্যা ও দৌহিত্রাদি নিকটে না থাকায় ও মনের স্বচ্ছন্দতা না থাকায়, তাহাদিগকে ফরাসডাঙ্গায় লইয়া যান।

 এই সময়ে পৌষের প্রারম্ভে, জাহানাবাদের অনাররি মাজিষ্ট্রেট্ কয়াপাঠ বদনগঞ্জ-নিবাসী রামরাঘব মুখোপাধ্যায়, স্বকীয় কোনও বিষয়কর্ম্মোপলক্ষে কলিকাতায় আসিয়া, ঈশানচন্দ্রের সহিত কথোপকথন-সময়ে আমার সহিত আলাপ হওয়ায়, তাঁহাকে দাদার নিকট পরিচিত করিয়া দিই। তিনি দাদার কোষ্ঠী লইয়া দেশে গমন করেন। তথায় গণনা করিয়া মৃত্যু-আশঙ্কা ব্যক্ত করিয়া, অযুত হোমের ও পঞ্চাঙ্গ-স্বস্ত্যয়নের ব্যবস্থা করিয়া পত্র লিখেন। ফাল্গুন মাস হইতে ফরাসডাঙ্গা আর স্বাস্থ্যকর বোধ হইল না। উল্লিখিত গণনায় জলমগ্ন হইবার আশঙ্কা প্রভৃতি অবলোকন করিয়া, নিজের তাদৃশ বিশ্বাস না থাকায়, কেবল কন্যা প্রভৃতির অনুরোধে, পঞ্চাঙ্গ-স্বস্ত্যয়ন ও হোমের ব্যবস্থা করিয়া, কলিকাতায় বাদুড়বাগানের বাটীতে পুরোহিত ও ব্রাহ্মণদিগকে নিযুক্ত করেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু ফলোদয় হইল না। উত্তরোত্তর পীড়া বৃদ্ধি হইতে লাগিল। তদ্দর্শনে, আর ফরাসডাঙ্গায় অবস্থিতি করা উচিত নয় এই বিবেচনায়, জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে কলিকাতায় আসিয়া চিকিৎসার উদেযাগ পাইতে লাগিলেন। এই সময় এলোপ্যাথি ডাক্তার ও আয়ুর্ব্বেদীয় চিকিৎসক মহাশয়েরা বলিলেন, “অহিফেনের মাত্রা এত অধিক পরিমাণে থাকিলে, আমাদের চিকিৎসায় উপকার দর্শিবে না।” কলুটোলা হইতে সেখ আবদুল লতীব হকিমকে আফিং পরিত্যাগ করাইবার জন্য আনাইলেন। ১৮ই আষাঢ় হইতে উক্ত হকিমের চিকিৎসা আরম্ভ হইল।

 তাঁহার ব্যবস্থায় পীড়ার উপশম হইতে লাগিল; কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, দুই দিন পরে হিক্কা প্রভৃতি উদয় হইয়া, ২০ শে আষাঢ় কম্পের সহিত জ্বরের উদয় হইল। ২১ শে আষাঢ় জ্বরের হ্রাস হইল বটে, কিন্তু হিক্কা প্রবল হইয়া হস্তপদ শীতল হইল; কিন্তু তথাপি উক্ত হিক্কা নিবারণ জন্য অপর ঔিষধ ব্যবহার করিলেন না। ঐ দিবসেই হকিমের ঔষধে অহিফেন ভিন্ন অপর মাদকদ্রব্য-নিবন্ধন দুই তিন দিন প্রলাপ হয়। এই সময়ে সমাগত ব্যক্তিদিগকে সাবেক অভ্যাস অনুসারে সমধিক সমাদর করিতে লাগিলেন এবং