পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত

ভাবে প্রত্যহ আসিতে ও দেখিতে পারি, তদ্বিষয়ে আমার মনে কিছুমাত্র আপত্তি বা অসন্তোষ নাই।” পর দিবস ৭ই শ্রাবণ বৈকালে, দাদা পূর্ব্বে মধ্যে মধ্যে যে ঔষধ ব্যবহার করিতেন, সেই ঔষধ ব্যবহৃত হইতে লাগিল। ৯ই শ্রাবণ রাত্রিতে সামান্য পুরাতন মল নিৰ্গত হয় ও ১০।১১ই শ্রাবণ তাঁহাকে সকলে কিঞ্চিৎ সুস্থ বলিয়া বোধ করিলেন। ঐ দিবস কনিষ্ঠ সহোদর ঈশান, ভালরূপ পরীক্ষা করিয়া বলিলেন, “যাতনা প্রভৃতি পীড়ার লক্ষণগুলির হ্রাস হইয়াছে বটে, কিন্তু নাড়ীর ব্যতিক্রম ঘটিয়াছে এবং আরও দুই একটি লক্ষণ উদয় হইয়াছে, তাহাতে অদ্য আমার বিবেচনায় আর কিছুমাত্র আশা নাই। তরুণবয়স্ক হইলে অদ্যই মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু পরিণতবয়স্ক বলিয়া ও শরীরের দৃঢ় গঠন বলিয়া, মৃত্যুর আরও ২।৩ দিন বিলম্ব আছে।” শেষ কয়েক দিবস যদিও প্রত্যহ জ্বর বৃদ্ধি হইতে লাগিল, তথাপি অল্প অল্প অল্প দাস্ত হওয়ায়, মৃত্যুর সময় পর্য্যন্ত তাঁহার জ্ঞানের ব্যতিক্রম ঘটে নাই।

 সচরাচর মৃত্যুর পূর্ব্ব জ্বরবিচ্ছেদ হইয়া নাড়ী ত্যাগ হয়, কিন্তু ১৩ই শ্রাবণ অপরাহ্ন হইতে জ্বর বৃদ্ধি হইতে লাগিল। রাত্রি ৯টার পর হইতে প্রতি মিনিটে নাড়ীর গতি এক শত ত্রিশ ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সংখ্যা ৫০শের নূ্ন্য নহে। কিন্তু এই পীড়ায় অন্য সময়ে নাড়ীর স্বাভাবিক গতি ৬০এর উৰ্দ্ধ নহে।

 এই দিবস রাত্রি একটা পনর মিনিটের পর জ্ঞানরাশির জ্ঞানলোপ হইল। দুইটা আঠার মিনিটের সময় তিনি এই অসার সংসার পরিত্যাগ করিলেন। তাঁহার আত্মীয়বর্গ তাঁহাক নিজ-ব্যবহৃত পল্যঙ্কে শয়ন করাইয়া, তাঁহার এক মাত্র পুত্র নারায়ণকে সমভিব্যাহারে লইয়া, তাঁহার আদরের জিনিস মেট্টোপলিটান কলেজে কিয়ৎক্ষণ রাখিয়া, বন্ধুবান্ধব সমভিব্যাহারে পুনরায় স্কন্ধে বহন পূর্ব্বক নিমতলার ঘাটে নামাইলেন, ও কিয়ৎক্ষণ পরে শ্মশানে গিয়া অন্তোষ্টিক্রিয়া সমাপন করিলেন। অনন্তর সকলে গঙ্গায় স্নানতৰ্পণাদি সমাপন করিয়া, বাদুড়বাগানের বাটীতে প্রত্যাগমন করিলেন।

সম্পূর্ণ।