পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশুচরিত।
২৩

“দেখুন পা ফুলিয়া গিয়াছে; আর পা ফেলিতে পারিব না।” পিতা বলিলেন, “খানিক চল, আগে যাইয়া তরমুজ কিনিয়া দিব”; এই বলিয়া ভুলাইতে আরম্ভ করিলেন, কিন্তু তিনি কিছুতেই এক পাও চলিলেন না। পিতৃদেব বলিলেন, “যদি চলিতে না পরিবে, তবে লোক সঙ্গে লইতে কেন নিবারণ করিলে?” এই বলিয়া প্রহার করিলেন। প্রহার খাইয়া দাদা রোদন করিতে লাগিলেন। “তবে তুই এখানে থাক্‌, আমি চলিলাম,” এই বলিয়া পিতা কিয়দ্দ‌ূর যাইয়া দেখিলেন, দাদা সেই স্থানেই বসিয়া আছেন, এক পাও চলেন নাই; কি করেন অগত্যা ফিরিয়া আসিয়া দাদাকে স্কন্ধে লইয়া চলিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বলিলেন, “এবার খানিক চল, আগের দোকানে তরমুজ কিনিয়া দিব।” পিতৃদেব অতি খর্ব্বকায় ও ক্ষীণজীবী ছিলেন; সুতরাং অষ্টমবর্ষীয় বালককে স্কন্ধে করিয়া অধিক দূর গমন করা সহজ ব্যাপার নহে; একারণ কিয়দ্দূর যাইয়া স্কন্ধ হইতে নামাইলেন। তথায় তরমুজ খাওয়াইলেও চলিতে অসমর্থ হইলেন। সুতরাং পিতা কখন কাঁধে, কখন ক্রোড়ে করিয়া চলিলেন। অনন্তর তাহারা সন্ধ্যার সময় রামনগরের রামতারক মুখোপাধ্যায়ের বাটীতে উপস্থিত হইলেন। দাদার পদদ্বয়ের বেদন ভাল হইবার জন্য পিতৃষ্ব‌সা অন্নপূর্ণা দেবী উষ্ণ তৈল দিয়া, পদদ্বয় মর্দ্দ‌ন করিয়া দিলেন। পরদিন তথায় অবস্থিতি করিলেন। একদিবস তথায় থাকায়, পায়ের বেদনার হ্রাস হইল। সুতরাং অক্লেশে পরদিন বৈাস্তবাটীর পথে গমন করিলেন, এবং তথা হইতে নৌকারোহণে সন্ধ্যার সময় কলিকাতায় বড়বাজারের বাসায় উপস্থিত হইলেন।

 কয়েকদিন পরে পিতা স্থির করিলেন যে, আমাদের বংশের পূর্ব-পুরুষগণ সকলেই সংস্কৃত অধ্যয়ন করিয়া বিদ্যা‌দান করিয়াছেন; কেবল আমাকে দুর্ভাগ্য-প্রযুক্ত বাল্যকাল হইতে সংসার-প্রতিপালন-জন্য আশু অর্থকরী ইংরাজী বিদ্যা শিক্ষা করিতে হইয়াছে। ঈশ্বর সংস্কৃত অধ্যয়ন করিলে, দেশে টোল করিয়া দিব। জগদ্দুর্ল্ল‌ভ সিংহের বাটীতে অনেক পণ্ডিত বাৰ্ষিক আদায়