পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

পাত্র পরিষ্কার করিয়া আহার করিতেন। একারণ তাঁহার উচ্ছিষ্টপাত্রে অনেকে শ্রদ্ধাপূর্বক ভোজন করিতে ইচ্ছা করিত। অগ্রজ মহাশয়, মধ্যম সোদর দীনবন্ধুকে সংস্কৃত-কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রবিষ্ট করাইয়া দেন। তৎকালে হরিপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন উক্ত শ্রেণীর অধ্যাপক ছিলেন। দীনবন্ধু, বাল্যকালে লেখাপড়া শিক্ষা বিষয়ে ঔদাস্য অবলম্বন করিতেন বটে, কিন্তু অদ্বিতীয় বুদ্ধিমান ছিলেন। অনেকে দীনবন্ধুকে শ্রুতিধর বলিত। অধিক কি, সংস্কৃত-কবিতা একবারমাত্র শ্রবণ করিলেই দীনবন্ধুর কণ্ঠস্থ হইত। পিতৃদেব স্বীয় কার্য্য সমাধা করিয়া, রাত্রি নয়টার সময় বাসায় আসিতেন। জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম পুত্র উভয়ে মনোযোগপূর্ব্বক পাঠাভ্যাস করিতেছেন দেখিলে, তিনি পরমাহ্লা‌দিত হইতেন। প্রদীপ জ্বলিতেছে, পুস্তক খোলা রহিয়াছে, অথচ উভয়েই নিদ্রা যাইতেছে দেখিবামাত্র, ক্রোধান্ধ হইয়া অত্যন্ত প্রহার করিতেন। প্রহারে উভয়ে অত্যন্ত চীৎকার করিয়া রোদন করিতেন; ইহাঁদের রোদন শুনিয়া গৃহস্বামী সিংহ মহাশয়ের পরিবারগণ অত্যন্ত দুঃখিত হইতেন এবং তাহাঁরা স্পষ্টাক্ষরে বলিতেন, ছোট ছোট প্রাণসম সন্তানগণকে এরূপ প্রহার করা উচিত নহে। এইরূপ প্রহারে কোন দিন মরিয়া যাইতে পারে; তজ্জন্য আপনাকে আমরা পুনঃপুনঃ বলিয়া থাকি যে, ছোট ছোট ছেলেকে এরূপ নির্দ্দ‌য়ভাবে যদি প্রহার করেন, তাহা হইলে আপনার এখানে থাকা হইবে না। ইহাতে প্রহারের অনেকটা লাঘব হইয়াছিল। পিতৃদেব রাত্রি নয় ঘটিকার সময় বাসায় আগমন করিয়া পাকারম্ভ করিতেন; পাক ও আহার করিয়া রাত্রি একাদশ ঘটিকার পর সকলে শয়ন করিতেন। পুনর্ব্বা‌র শেষ রাত্রিতে নিদ্রাভঙ্গ হইলে, পিতার নিকট যে সকল উদ্ভট-কবিতা শিক্ষা করিয়াছিলেন, সেই গুলি আবৃত্তি করিতেন। সূর্য্যোদয় হইলে পর, কলেজের পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করিতেন; তৎপরে গঙ্গাস্নান করিয়া প্রাতঃসন্ধ্যা করিতেন এবং পাকাদিকার্য্য সমাধানান্তে ভোজন করিয়া বিদ্যালয়ে যাইতেন। অগ্রজ মহাশয় সন্ধ্যার ক্রমগুলি প্রকাশ্যরূপে দেখাইতেন। লোকে জানিত যে, অগ্রজ