পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৩৫

রেশম ও কাপড়ের ব্যবসার জন্য কুঠী প্রস্তুত করিয়াছিলেন। ভট্টাচার্য্য মহাশয়, ক্ষীরপাই গ্রামের মধ্যে ক্ষমতায়, মান্যে ও সদ্ব্যয়ে সর্বপ্রধান লোক ছিলেন। বিশেষতঃ কন্যাটি অতি সুলক্ষণা ও দর্শনীয়া ছিলেন এবং কোষ্ঠীর ফলও ভাল ছিল। ভট্টাচার্য্য মহাশয় বলিলেন, “আমার এই কন্যা পাদুকা। কোষ্ঠী-গণনার ফলে জানিবেন যে, এই কন্যা যাহাকে দান করা যাইবে, সর্ব্ব‌প্রকারে তাঁহার অচলা লক্ষ্মী হইবে।” পুনরায় ভট্টাচার্য্য মহাশয় পিতৃদেবকে বলিলেন, “বন্দ্যোপাধ্যায়! তোমার ধন নাই, কেবল তোমার পুত্র বিদ্বান্‌ হইয়াছেন; এই কারণে আমার প্রাণসম তনয়া দিনময়ীকে তোমার পুত্রের করে সমর্পণ করিলাম।” বিবাহ করিতে অগ্রজের আন্তরিক ইচ্ছা ছিল না। যাবজ্জী‌বন লেখাপড়া শিখিব, সাধ্যানুসারে দেশের উপকার করিব, তাঁহার এই আন্তরিক ইচ্ছা ছিল। কেবল পিতার ভয়ে অগত্যা বিবাহ করিতে সম্মত হইয়াছিলেন। ক্ষীরপাইনিবাসী শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের দিনময়ী নামী অষ্টমবর্ষীয়া সুলক্ষণা ও দর্শনীয়া দুহিতার সহিত অগ্রজের পাণিগ্রহণ-বিধি সমাধা হইল।

 পঞ্চদশবর্ষ বয়ঃক্রমকালে অগ্রজ মহাশয় অলঙ্কারশাস্ত্রের শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইলেন। তৎকালে প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশ মহাশয় অলঙ্কারের অধ্যাপক ছিলেন। তর্কবাগীশ মহাশয় ব্যাকরণ, সাহিত্য ও অলঙ্কার শাস্ত্রে বিশিষ্টরূপ বুৎপন্ন ছিলেন। সংস্কৃত গদ্য-পদ্য-রচনাবিষয়ে তাঁহার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। অলঙ্কার শ্রেণীতে প্রবিষ্ট ছাত্রগণ, তাঁহার নিকট অধ্যয়ন করিয়া, সংস্কৃতভাষায় সম্যক বুৎপত্তি লাভ করিত। ইনি পরিশ্রমশালী ছিলেন, এজন্য সকলে ইহাঁর প্রশংসা করিত। তৎকালে অগ্রজই অলঙ্কার-শ্রেণীতে সকল বালক অপেক্ষা অল্পবয়স্ক ও খর্বাকৃতি ছিলেন। অলঙ্কার-শ্রেণীতে এরূপ ছোট বালক অধ্যয়ন করিতেছে দেখিয়া, অন্যান্য লোক আশ্চর্য্যান্বিত হইত। ইনি এক বৎসরের মধ্যে সাহিত্যদর্পণ, কাব্যপ্রকাশ, রসগঙ্গাধর প্রভৃতি অলঙ্কার গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন, এবং বাৎসরিক পরীক্ষায় সর্ব্বো‌ৎকৃষ্ট হইয়া, সর্ব্বপ্রধান