পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

কীদৃশী বুৎপত্তি জন্মিয়াছে, প্রশ্ন করিয়া অবগত হউন।” সাহিত্যদর্পণের রসের বিচারস্থল জিজ্ঞাসা করিলে, অগ্রজ মহাশয় যেরূপ ব্যাখ্যা করিলেন, তাহা শ্রবণ করিয়া তর্কপঞ্চানন মহাশয় আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বলিলেন, “এই বালকের বয়োবৃদ্ধি হইলে, বাঙ্গালা দেশের মধ্যে অদ্বিতীয় লোক হইবে। এত অল্পবয়সে এরূপ সংস্কৃত-ভাষায় বুৎপন্ন লোক আমার কখন দৃষ্টিগোচর হয় নাই।” ইহা শুনিয়া তারানাথ তর্কবাচস্পতি বলিলেন, “আমরা এই বালককে কলেজের মহামূল্য অলঙ্কারস্বরূপ জ্ঞান করিয়া থাকি।”

 তর্কপঞ্চানন মহাশয় শেষাবস্থায় কাশীবাস করিয়াছিলেন। তথায় সোণারপুর মহল্লাতে বহুসংখ্যক হিন্দুস্থানী, বাঙ্গালী, মহারাষ্ট্রীয়, দণ্ডী, পরমহংস ও ব্রহ্মচারীকে ন্যায়, বৈশেষিক, সাঙ্খ্য, পাতঞ্জল, বেদান্ত, মীমাংসা এই ষড়দর্শন ও অন্যান্য দর্শনশাস্ত্রের গ্রন্থ সকল অধ্যয়ন করাইতেন। তর্কপঞ্চানন মহাশয় মধ্যে মধ্যে ঐ সকল দণ্ডী প্রভৃতি ছাত্রগণের নিকট অগ্রজের বিষয় গল্প করিতেন। আমি কাশীতে তর্কপঞ্চাননের প্রমুখাৎ জ্যেষ্ঠের বাল্যকালের বহুতর গল্প শ্রবণ করিয়াছি।

 এই সময় দাদা কলেজে মাসিক ৮৲ টাকা বৃত্তি প্রাপ্ত হন। তৎকালীন কলেজের নিয়মানুসারে অলঙ্কার, ন্যায়, বেদান্ত ও তৎপরে স্মৃতিশাস্ত্র পর্য্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ছাত্রগণ প্রথমে ন্যায়-দৰ্শন-শাস্ত্রের শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইয়া অধ্যয়ন করিত; তাহার পর বেদান্ত-শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইয়া, বেদান্ত অধ্যয়ন করিত; তদনন্তর স্মৃতির শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইয়া মনুসংহিতা, মিতাক্ষরা, জীমূতবাহন-কৃত দায়ভাগ প্রভৃতি অধ্যয়ন করিয়া, জজ-পণ্ডিতের পদ-প্রার্থনায় ল-কমিটির পরীক্ষা দিবার জন্য প্রস্তুত হইত। অগ্রজ মহাশয়, কলেজের অধ্যক্ষ মহাশয়ের নিকট আবেদন করিয়া, অলঙ্কার-শ্রেণী হইতে অগ্রে স্মৃতিশ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইলেন। ঐ সময় রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ প্রভৃতি স্মৃতি-শাস্ত্রের উপযুক্ত অধ্যাপকগণ, নানা কারণে পদচ্যুত হইয়াছিলেন। তৎকালীন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষগণ, দৰ্শন-শাস্ত্রজ্ঞ হরনাথ তর্কভূষণ মহাশয়কে স্মৃতিশাস্ত্রের