পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

অধ্যাপক ছিলেন। তিনি দাদাকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন। বাচস্পতি মহাশয়ের যাহা কিছু যুক্তি বা পরামর্শ, তৎসমস্তই দাদার সহিত হইত। বেদান্ত, পাতঞ্জল কি সাঙ্খ্য গ্রন্থের যে যে স্থলে পাঠের সন্দেহ হইত বা অসংলগ্ন বোধ হইত, তদ্বিষয়ের সন্দেহ-ভঞ্জনার্থ তাঁহার সহিত বাদানুবাদ করিতেন। তাহাতে তিনি আন্তরিক সন্তুষ্ট হইয়া বলিতেন যে, তুমি ঈশ্বর। ঐ সময়ে পিতৃদেব, অষ্টমবর্ষবয়ঃক্রমকালে বিদ্যাশিক্ষার মানসে আমায় কলিকাতায় লইয়া আইসেন। কয়েকদিন পরে, দাদা আমাকে সংস্কৃত-কলেজের ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে প্রবিষ্ট করিয়া দিলেন। তৎকালে ঐ শ্রেণীতে গঙ্গাধর তর্কবাগীশ মহাশয় অধ্যাপক ছিলেন। আমি ঈশ্বরের তৃতীয় সহোদর, একারণ তিনি আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করিতেন। তিন ভ্রাতা ও পিতা এবং দয়ালচাঁদ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি সকলের দুই বেলার পাকাদিকার্য্য অগ্রজ মহাশয়ই সম্পন্ন করিতেন। যে গৃহে পাক করিতেন, তাহার অতি সন্নিহিত স্থানে অপরের পাইখানা ছিল; সুতরাং পাকশালায় বসিলেই অত্যন্ত দুৰ্গন্ধ বোধ হইত। এক্ষণে মিউনিসিপালিটির বন্দোবস্তে পাইখানায় আর সেরূপ দুৰ্গন্ধ থাকে না। তৎকালে কলিকাতায় মিউনিসিপালিটী ছিল না, পথে ময়লা ফেলিলেও কেহ কোন কথা বলিতেন না। পাকগৃহটী অত্যন্ত অন্ধকার ছিল; একটী মাত্র দ্বার ব্যতীত জানালা ছিল না। পাকশালা অত্যন্ত ছোট ছিল এবং উহা তৈলপায়ী অর্থাৎ আরসুলায় পরিপূর্ণ থাকিত। প্রায় মধ্যে মধ্যে দুই চারিটা আরসুলা ব্যঞ্জনে পতিত হইত। দৈবাৎ একদিন অগ্রজের ব্যঞ্জনে একটা আরসুলা পড়িয়াছিল। প্রকাশ করিলে বা পাতের নিকট ফেলিয়া রাখিলে, ভ্রাতৃগণ বা পিতা মহাশয় ঘৃণাপ্রযুক্ত আর ভোজন করিবে না, এই আশঙ্কায় তিনি সমস্ত আরাসুলা, ব্যঞ্জনসহিত উদরস্থ করিলেন। ভোজনের কিয়ৎক্ষণ পরে, আরসুলা খাইবার কথা ব্যক্ত করিলেন। তাহা শুনিয়া উপস্থিত সকলেই আশ্চর্য্যান্বিত হইলেন।

 যে স্থানে আহার করিতে বসিতেন, তাহার নিকটস্থ নর্দ্দা‌মা হইতে