পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

অগ্রজ ইহাঁর নিকট তিন বৎসর, এবং নিমচাঁদ শিরোমণির নিকট এক বৎসর এই চারি বৎসর রীতিমত পরিশ্রম করিয়া, প্রায় সমগ্র দৰ্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ইহাতে অন্যান্য পণ্ডিতগণ অবাক হইয়াছিলেন। কারণ, অপরে ১০।১২ বৎসরে যে শাস্ত্র শেষ করিতে পারে না, ঈশ্বর এত স্বল্প সময়ের মধ্যে কেমন করিয়া তাহা শেষ করিল।

 যৎকালে দৰ্শন-শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেন, তখন দেশে যাইলে অনেকের সহিত তাঁহার বিচার হইত। সকলেই তাঁহার সহিত বিচারে সন্তুষ্ট হইয়া, তাঁহাকে আশীৰ্বাদ করিতেন। একদা বীরসিংহ গ্রামের কৃষ্ণচন্দ্র বিশ্বাস সমারোহপূর্বক মাতৃশ্রাদ্ধ করেন। তিনি দাদার নিকট শ্রাদ্ধে ভট্টাচার্য্যনিমন্ত্রণ-জন্য সংস্কৃত-কবিতা প্রস্তুত করাইয়া লন। শ্রাদ্ধের দিন নানাস্থান হইতে পণ্ডিতমণ্ডলী আসিয়াছিলেন। কে এরূপ কবিতা রচনা করিয়াছেন, তাহা জানিবার জন্য পণ্ডিতগণ ব্যগ্র হইলেন। পরে অগ্রজকে ঐ কবিতারচয়িতা জানিয়া, সকলে তাঁহার সহিত বিচারে প্রবৃত্ত হইয়া পরাস্ত হন। অবশেষে কুরাণগ্রামনিবাসী সুবিখ্যাত দর্শনশাস্ত্রবেত্তা রামমোহন তর্কসিদ্ধান্তের সাহিত প্রাচীন ন্যায় গ্রন্থের বিচার হয়; বিচারে তর্কসিদ্ধান্ত মহাশয়ের পরাজয় হয় শুনিয়া, পিতৃদেব, তর্কসিদ্ধান্তের পদরজঃ লইয়া দাদার মস্তকে দেন। পিতৃদেব অনেক স্তবস্তুতি করিয়া তর্কসিদ্ধান্তকে সান্ত্ব‌না করেন। তর্কসিদ্ধান্ত মহাশয় বিচারে পরাজিত হইয়া, পিতৃদেবকে বলেন যে, “তোমার পুত্র ঈশ্বর যেরূপ কাব্য, অলঙ্কার, স্মৃতি ও ন্যায়শাস্ত্র শিক্ষা করিয়াছে, এরূপ বঙ্গদেশের মধ্যে কেহই শিক্ষা করিতে পারেন না; উত্তরকালেও যে, অপর কেহ শিক্ষা করিতে পরিবেন, এরূপ আশা করা যাইতে পারে না। ঈশ্বরের প্রতি সরস্বতীর কৃপাদৃষ্টি হইয়াছে, নচেৎ এই অল্পবয়সে এত শাস্ত্র কেমন করিয়া শিক্ষা করিয়াছে।” কোন কোন পণ্ডিত সর্ব্ব‌সমক্ষে ব্যক্ত করিলেন যে, “ঈশ্বরের পিতামহ বহুকাল তীর্থক্ষেত্রে তপস্যা করিতেছিলেন; স্বপ্ন দেখিয়া দেশে আসিয়া ঈশ্বর ভূমিষ্ঠ হইবামাত্র, জিহ্বায় কি মন্ত্র লিখিয়া দিয়াছিলেন;