পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



চাকরি।
৫৫

করিতেন। ঐ সময় দুর্গাচরণ বাবুর মত সুবিজ্ঞ লোক আতি বিরল ছিল। তিনি অগ্রজের পরম বন্ধু ছিলেন। প্রথমতঃ দুর্গাচরণ বাবুই স্বয়ং দাদাকে ইংরাজী-ভাষা শিখাইতে প্রবৃত্ত হইলেন। কিছু দিন পরে, তাঁহার ছাত্র বাবু নীলমাধব মুখোপাধ্যায়ের উপর ইংরাজী পড়াইবার ভারার্পণ করেন। নীলমাধব বাবু সামান্য দিন শিক্ষা দেন। অনন্তর তৎকালীন হিন্দু-কলেজের ছাত্র, বাবু রাজনারায়ণ গুপ্তকে মাসিক ১৫৲ টাকা বেতন দিয়া, অগ্রজ মহাশয় প্রত্যহ প্রাতঃকাল হইতে বেলা নয়টা পর্য্যন্ত ইংরাজী-ভাষা অধ্যয়ন করিতেন। এইরূপে কিছু দিন অতীত হইলে, সিবিলিয়ানগণের পরীক্ষার কাগজ দেখিতে যেরূপ ইংরাজী ভাষা অবগত হওয়া আবশ্যক, সেইরূপ শিক্ষা হইল।

 পিতৃদেব তৎকাল পর্য্য‌ন্ত সামান্য বেতনের কর্ম্ম করিতেন। অগ্রজ মহাশয় অনেক অনুনয় ও বিনয় করিয়া, পিতৃদেবকে কর্ম্ম হইতে অবসর লইয়া দেশে অবস্থিতি করিবার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু, পিতৃদেব কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া পুত্রের অধীনে থাকিয়া সংসারের ও অপর পুত্রগণের লেখাপড়ার ব্যয় নির্ব্বা‌হ করায়, অনিচ্ছা প্রকাশ করিলেন। অনেক বাদানুবাদের পর জ্যেষ্ঠাগ্রাজের সবিশেষ অনুরোধে সন্মত হইলেন। কর্ম্ম-পরিত্যাগ-সময়ে তাঁহার প্রভু, পিতৃদেবকে উপদেশ দেন যে, “ছেলেমানুষের কথায় উপস্থিত কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া, পরাধীন হওয়া উচিত নয়। যখন অসমর্থ হইবে, তখন ঐ ছেলে উচ্ছৃঙ্খল হইয়া যদি তোমার সাহায্য না করে, তখন কি পুনরায় চাকরি করিতে আসিবে?” পিতৃদেব তাঁহাকে বলেন যে, “আমার পুত্র সাক্ষাৎ যুধিষ্ঠিরের মত ধর্ম্মশীল এবং আমায় দেবতুল্য-জ্ঞানে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করিয়া থাকে। তাহার কথা অবহেলন করিতে পারিব না। যদি তাহাকে অধার্ম্মিক ও দুশ্চরিত্র জানিতাম, তাহা হইলে কখনই কর্ম্ম ত্যাগ করিতাম না।” তদবধি অগ্রজ মাসিক-ব্যয়-নির্ব্বা‌হার্থ, পিতৃদেবকে প্রতি মাসের প্রথমেই ২০৲ টাকা প্রেরণ করিতেন। অবশিষ্ট ৩০৲ টাকায় কষ্টেসৃষ্টে বাসার ব্যয় নির্ব্বা‌হ করিতেন। তৎকালে বাসায় আমরা তিন সহোদর, দুই