পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরি।
৫৯

হইলে, অগ্রজ মহাশয়, সাহেবকে অনুরোধ করিয়া, তাঁহার সহাধ্যায়ী মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশকে ঐ পদে নিযুক্ত করিয়া দেন।

 এই সময়ে লর্ড হার্ডিঞ্জ বাহাদুর ভারতবর্ষের গবর্ণর জেনেরেলের পদ প্রাপ্ত হইয়া এদেশে আইসেন। উক্ত মহাত্মা এক সময় কলেজ পরিদর্শন-জন্য আগমন করিয়া, কথা-প্রসঙ্গে অবগত হইলেন যে, সংস্কৃত-কলেজের ছাত্রগণ ইংরাজী অধ্যয়ন করে না; একারণ তাহারা ভাল কর্ম্ম পায় না। প্রতি জেলায় যে একজন করিয়া জজপণ্ডিত ছিল, তাহাও সম্প্রতি উঠাইয়া দেওয়া হইয়াছে; তজ্জ‌ন্য সংস্কৃত-কলেজের ছাত্রসংখ্যা অতি অল্প হইয়াছে। সাহেব, সংস্কৃত কলেজের বিদ্যার্থিগণের উৎসাহ-বৰ্দ্ধনার্থ বঙ্গদেশে একশত একটী বাঙ্গালা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। গবর্ণমেণ্ট, সকল বিদ্যালয়ের পণ্ডিতের পরীক্ষার ভার, মার্শেল সাহেবের প্রতি অৰ্পণ করেন। অগ্রজ মহাশয় উক্ত সাহেবের পণ্ডিত ছিলেন; সাহেব, বাঙ্গালা ভাষা ভাল জানিতেন না, তজ্জ‌ন্য দাদাই উহাঁদের পরীক্ষা করিয়া, পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত করিয়া দিতেন। তৎকালে অন্য কোন বাঙ্গালা পুস্তক ছিল না। পুরুষ-পরীক্ষা, জ্ঞান-প্রদীপ, হিতোপদেশের বাঙ্গালা, অন্নদামঙ্গল প্রভৃতি পুস্তকের পরীক্ষা হইত। লীলাবতীর অঙ্ক ও ভূগোল পরীক্ষায় যাহারা উত্তীর্ণ হইবে, সেই সকল পণ্ডিতকেই নিযুক্ত করা আবশ্যক; একারণ, তিনি তৎকালে ভাল ভাল পণ্ডিত নির্ব্বা‌চন করিয়া দিতেন। তজ্জ‌ন্য কত পণ্ডিত যে বাসায় আসিতেন, তাহা বলা বাহুল্য। সংস্কৃত-কলেজে অনেক মহামান্য পণ্ডিত থাকাতেও, সাহেব তাঁহাকে যে পরীক্ষক নির্বাচন করিয়াছিলেন, ইহাতে সাধারণ লোকে সাহেবের যথেষ্ট প্রশংসা করিয়াছিলেন। কিন্তু পণ্ডিতগণের মধ্যে অনেকে মনে মনে ঈর্ষ‌্যা‌ করিয়া বলিতেন যে, আমরা বিদ্যমান থাকিতে, সাহেব, ঈশ্বরকে বহুসংখ্যক পণ্ডিতের পরীক্ষক নিযুক্ত করিলেন। অগ্রজ মহাশয় নিরপেক্ষভাবে লোক-নির্ব্বা‌চন করায়, তাঁহার বিশিষ্টরূপ সুখ্যাতি হইয়াছিল। অদ্যাপি হার্ডিঞ্জ বাহাদুরের কীর্ত্তিস্তম্ভস্বরূপ বাঙ্গালা স্কুল, কোন কোন স্থানে দেখিতে পাওয়া যায়।