পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরি।
৬১

পারিতেন, তাহার বাটীতে যাইয়া সকল অভাব পূরণ করিতেন। তিনি তৎকালে বাসাস্থিত ভ্রাতা এবং অন্যান্য আত্মীয়াদিগকেও ঐ সকল রোগীর শুশ্রূষার জন্য পাঠাইতেন; একারণ, অনেকেই বলিত, ঈশ্বরের মত দয়ালু ও ধর্ম্মশীল লোক সচরাচর দৃষ্টিগোচর হয় নাই।

 ইহার কিছু দিন পরে, দর্শনশাস্ত্রাধ্যাপক জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চাননের নারিকেলডাঙ্গাস্থ ভবনে, তাঁহার ভাগিনেয় ঈশানচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের ওলাউঠা হয়। তর্কপঞ্চানন মহাশয়, ভয়ে ভাগিনেয়কে বাটীর বাহিরে সামান্য একস্থানে রাখিয়াছিলেন, চিকিৎসা করান হয় নাই, মৃত্যুর আশঙ্কায় শয্যা পর্য্যন্ত দেন নাই; রোগীকে দরমার উপর শয়ান রাখা হইয়াছিল। অগ্রজ মহাশয়, এই সংবাদ পাইয়া, ডাক্তার বাবু দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমভিব্যাহারে লইয়া, নারিকেলডাঙ্গায় তর্কপঞ্চাননের ভবনে উপস্থিত হইয়া, চিকিৎসা করাইতে প্রবৃত্ত হন। ঐ রাত্রিতেই মধ্যম সহোদর দীনবন্ধু ন্যায়রত্নকে বহুবাজারে পাঠাইয়া, বালিশ, তোষক, মাদুর প্রভৃতি আনাইয়াছিলেন। নিশীথসময়ে মুটে না পাওয়ায়, মধ্যনাগ্রজ দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন স্বয়ং প্রায় দেড়ক্রোশ পথ উক্ত শয্যাদি মাথায় করিয়া লইয়া যান। অতঃপর রোগীকে ভাল শয্যায় শয়ন করান হইল, এবং রোগীর গাত্রের মলমূত্র অগ্রজ মহাশয় স্বহস্তে পরিষ্কার করিয়া দিলেন। তৎপরে রোগী সম্পূর্ণরূপ আরোগ্য লাভ করিলে, তিনি বাসায় গমন করিলেন। তর্কপঞ্চাননের ভাগিনেয় বিষম বিসূচিকা-রোগাক্রান্ত হইলেন; কিন্তু তর্কপঞ্চানন, তাঁহার শিশুসন্তানদিগকে ভয়ে রোগীর ত্রিসীমায় আগমন করিতে দেন নাই। অগ্রজ মহাশয়, বহুবাজার হইতে ডাক্তার, ঔষধ ও শয্যা-সাহিত তথায় যাইয়া, চিকিৎসা করাইলেন। তদ্দ‌র্শনে অনেকেই আশ্চর্য্যান্বিত হইয়াছিলেন। ইহার কিছুদিন পরে সংস্কৃত-কলেজের তৎকালীন সর্বপ্রধান ছাত্র প্রিয়নাথ ভট্টাচার্য্যের মধ্যম ও কনিষ্ঠ সহোদর বিসূচিকারোগগ্রস্ত হন। অগ্রজ মহাশয়, এই সংবাদ-প্রাপ্তিমাত্র দুর্গাচরণ বাবু প্রভৃতি ডাক্তারগণকে লইয়া চিকিৎসা করান। সুচিকিৎসায় প্রিয়নাথের মধ্যম সহোদর দীনবন্ধু