পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

আরোগ্যলাভ করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যপ্রযুক্ত তাঁহার সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা মৃত্যুমুখে নিপতিত হয়।

 ঐ সময় বহুবাজারস্থ বাসাবাটীর পার্শ্বে মোক্তার বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের এক ভৃত্যের ওলাউঠা হয়। মোক্তার বাবু, চাকরের হাত ধরিয়া উপর হইতে নামাইয়া পথে শোয়াইয়া রাখেন। অগ্রজ, তাহাকে ভূমিতে পতিত দেখিয়া, অনেক দুঃখ-প্রকাশ-পূর্ব্ব‌ক নিজ বাসায় লইয়া গিয়া, আপন শয্যায় শয়ন করাইলেন, এবং অবিলম্বে ডাক্তার আনাইয়া চিকিৎসা করাইতে লাগিলেন। পাঁচ সাত দিন চিকিৎসা ও শুশ্রূষায় রোগী সম্পূর্ণরূপ আরোগ্যলাভ করিল।

 ঐ সময় অগ্রজ মহাশয়, অনেক অনাথ ও পীড়িত লোকের চিকিৎসাদিকার্য্যে বিস্তর অর্থব্যয় করিয়াছিলেন। অগ্রজের এরূপ দিয়া দেখিয়া সকলেই বলিত, ইনি মানুষ নহেন, সাক্ষাৎ দেবতা। এইরূপ কত রোগীর প্রতি যে অগ্রজ দয়া প্রকাশ করিয়াছিলেন, বিস্তৃতিভয়ে তাহা লিখিতে ক্ষান্ত রহিলাম।

 এই সময় সংস্কৃত-কলেজের ব্যাকরণের প্রথম-শ্রেণীর পণ্ডিত হরনাথ তর্কভূষণ মাসিক ৯০৲ টাকা ও তৃতীয় শ্রেণীর পণ্ডিত গঙ্গাধর তর্কবাগীশ মাসিক ৫০৲ টাকা বেতনে কর্ম্ম করিতেন। ইহাঁদের উভয়ের মৃত্যু হইলে, এডুকেশন কৌনসেলের সেক্রেটারি ডাক্তার ময়েট্‌ সাহেব, ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের অধ্যক্ষ মার্শেল সাহেবের নিকট যাইয়া বলেন যে, উক্ত কার্য্য নির্ব্বা‌হের জন্য উপযুক্ত, দুইজন পণ্ডিত মনোনীত করিয়া দেন। তাহাতে মার্শেল সাহেব অগ্রজকে ব্যাকরণের প্রথম শ্রেণীর কর্ম্মে নিযুক্ত হইবার এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর নিমিত্ত একটী লোক মনোনীত করিয়া দিবার জন্য আদেশ করেন।

 ইহা শ্রবণ করিয়া অগ্রজ উত্তর করিলেন, “মহাশয়! আমি টাকার প্রত্যাশা করি না আপনার অনুগ্রহ থাকিলেই আমি কৃতার্থ হইব। আর আপনার নিকট থাকিলে, আমি অনেক নূতন নূতন উপদেশ পাইব। আমি দুইটী উপযুক্ত শিক্ষক মনোনীত করিয়া আপনাকে দিব।” এই কথা বলিয়া তারানাথ