পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

যার-পর-নাই সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। কষ্ট, সাহেবের পুরস্কারপ্রাপ্তির পরীক্ষায়, অগ্রজ মহাশয় প্রথম বৎসর এই প্রশ্ন দেন যে, বিদ্যা, বুদ্ধি, সুশীলতা এই তিনের গুণবর্ণনা করিয়া এই গুণত্রয়ের মধ্যে কোনটী প্রধান, তাহা সংস্কৃত- গদ্যে লিখ। তৎকালে ঐ পরীক্ষা ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে সমাধা হইত। সংস্কৃত-কলেজে সিনিয়র ছাত্রবর্গের মধ্যে নীলমাধব ভট্টাচার্য্য সর্ব্বাপেক্ষা উত্তম রচনা করিয়াছিলেন; সুতরাং তিনিই ঐ কষ্ট সাহেবের ৫০ টাকা প্রাপ্ত হন। দ্বিতীয় বৎসরে সংস্কৃত পদ্য লিখিবার প্রশ্ন হয়; তাহাতে দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন ও শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন এই দুইজন সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট হন। শ্রীশের ব্যাকরণ ভুল হইয়াছিল, কিন্তু দীনবন্ধুর ব্যাকরণ ভুল হয় নাই। দীনবন্ধু সহোদর, এজন্য লোকে যদি দুর্নাম করে, এই আশঙ্কায় শ্রীশকেই ঐ পারি-তোষিক প্রদান করিতে বাধ্য হন।

 এই সময়ে, রবার্ট কষ্ট পরীক্ষোত্তীর্ণ হইয়া পঞ্জাবপ্রদেশে নিযুক্ত হন, এবং অনেক দিন কর্ম্ম করিয়া স্বদেশাভিমুখে যাত্রা করেন। প্রস্থানের পূর্ব্বে একদিন অগ্রজের সহিত দেখা করিয়া, তিনি বলিলেন, “আমি স্বদেশে যাইতেছি, আর ভারতবর্ষে আসিব না, তোমার সহিত এই আমার শেষ দেখা।” কিয়ৎক্ষণ কথোপকথনের পর তিনি বলিলেন, “যদি পূর্ব্বের মত তোমার কবিতা-রচনার অভ্যাস থাকে, তাহা হইলে কল্য আমার বিষয়ে কিছু শ্লোক রচনা করিয়া পাঠাইলে, পরম আলাদিত হইব।” তদনুসারে অগ্রজ মহাশয় নিম্নলিখিত কয়েকটা কবিতা লিখিয়া, তাঁহার নিকট প্রেরণ করিয়াছিলেন।

“দোযৈর্বিনাকৃতঃ সর্ব্বৈঃ সর্ব্বৈরাসেবিতে গুণৈঃ।
কৃতী সর্ব্বাসু বিদ্যাসু জীয়াৎ কষ্টো মহামতিঃ॥১॥
দয়াদাক্ষিণমাধুর্য্যগাভীর্য্যপ্রমুখা গুণাঃ।
নয়বর্ত্ম রতে নূনং রমন্তেহস্মিন্ নিরন্তরম্॥ ২॥
সদা সদালাপরতেনিত্যং সৎপথবর্ত্তিনঃ।
সর্ব্বলোকপ্রিয়ন্যান্য সম্পদস্ত সদা স্থির॥ ৩॥