পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



8
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

ধ্যাপক জয়গোপাল তর্কালঙ্কার, অলঙ্কারের অধ্যাপক প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ, বেদান্তের অধ্যাপক শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি, দর্শনের অধ্যাপক নিমচাঁদ শিরোমণি ও জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন মহাশয়গণের প্রমুখাৎ দাদার বাল্যকালের পাঠ্যাবস্থার যে সকল বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়াছি, তাহা আমার হৃদয়পটে অঙ্কিত রহিয়াছে। এজন্য আশা করি, পাঠকবর্গ আমার লিখিবার রীতি-নীতি বিষয়ে যে সকল দোষ অবলোকন করিবেন, তাহা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনুগত ভৃত্য ও সহোদর বলিয়া, আমার সেই সকল দোষ ক্ষমা করিতে পারেন, এই সাহসে প্রোৎসাহিত হইয়া এই দুস্তর কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলাম।

 হুগলি-জেলার অন্তঃপাতী তারকেশ্বরের পশ্চিম ও জাহানাবাদ মহকুমার পূর্ব্বে‌, প্রায় ৪ ক্রোশ অন্তরস্থিত বনমালিপুর গ্রামে ঁভুবনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বাস করিতেন। তিনি সঙ্গতিপন্ন ও সংস্কৃতশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। তাঁহার পাঁচ পুত্র, সকলেই সংস্কৃতভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। তৃতীয় পুত্রের নাম রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রামজয়, ঘাঁটাল মহকুমার অন্তঃপাতী বীরসিংহগ্রামবাসী বিখ্যাত পণ্ডিত উমাপতি তর্কসিদ্ধান্তের দুর্গানাম্নী‌ কনিষ্ঠা কন্যার পাণিগ্রহণ করেন। কালক্রমে রামজয়ের দুইটী পুত্র, ও চারিটী কন্যা জন্মিয়াছিল। পুত্রদ্বয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম ঠাকুরদাস, কনিষ্ঠের নাম কালিদাস। কন্যা চারিটির নাম মঙ্গলা, কমলা, গোবিন্দময়ী ও অন্নপূর্ণা। ভুবনেশ্বর, বাৰ্দ্ধক্যনিবন্ধন মানবলীলা সম্বরণ করিলে পর, তাঁহার পুত্রগণের বিষয়-বিভাগ-উপলক্ষে পরস্পর বিষম মনান্তর ঘটে। রামজয়, ধার্ম্মিক ও উদারস্বভাব ছিলেন। তিনি অকিঞ্চিৎকর বিষয়ের জন্য, প্রাণসম সোদরবর্গের সহিত বিরোধ করা অতি গর্হি‌ত কর্ম্ম বিবেচনা করিয়া, দুইটী পুত্র ও চারিটী কন্যা রাখিয়া, কাহাকেও কোন কথা প্রকাশ না করিয়া, সন্ন্যাসীর বেশে তীর্থ-পর্য্য‌টনে প্রস্থান করেন। কিছু দিন পরে, তাঁহার পত্নী দুর্গাদেবীর বনমালিপুরে অবস্থিতি করা নিতান্ত অসহ্য‌ হইয়া উঠিল; সুতরাং পুত্রদ্বয় ও কন্যা-চতুষ্টয়কে লইয়া, পিতৃভবন বীরসিংহায় আগমন করিলেন। তাঁহার পিতা উমাপতি তর্কসিদ্ধান্ত, সমাদরপূর্বক নিরাশ্রর