পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
বিদ্যাসাগর জীবনচরিত।

হরচন্দ্র নামক চতুর্থ সহোদর, বিস্তুচিকারোগে আক্রান্ত হইয়া, অকালে কালগ্রাসে নিপতিত হয়। অনুগত, অসাধারণ বুদ্ধিশক্তিসম্পন্ন ভ্রাতার মৃত্যুসংবাদে অগ্রজ মহাশয় অত্যন্ত শোকাতুর হইয়াছিলেন। লেখাপড়ার চৰ্চা একেবারে পরিত্যাগ করিয়া, দিবারাত্র কয়েক মাস রোদনেই সময়াতিপাত করিতেন। পাঁচ ছয় মাস রীতিমত আহার না করায়, অতিশয় দুর্বল হইয়াছিলেন। ভ্রাতৃবর্গের মধ্যে হরচন্দ্র অত্যন্ত বুদ্ধিমান্ ছিল। তাহার উপর জ্যেষ্ঠের এরূপ আশা ছিল যে, (নিজে পরিবার, প্রতিপালনের জন্য চাকরি করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি, ইচ্ছামত্ ভালরূপ লেখাপড়া শিখিতে পারিলাম না; যাহা জানি, তাহাতে দেশের কোন উপকার হইবে না।)হরচন্দ্রকে মনের মত লেখাপড়া শিখাইব, তাহার দেশস্থ লোকের উপকার হইবে। জননীদেবী, পুত্রশোকে আহার-নিন্দ্রা-পরিত্যাগ-পূর্বক নিরন্তর রোদন করিয়া থাকেন, একারণ তাঁহার সান্ত্বানার জন্য অন্যান্য ভ্রাতৃবর্গকে কলিকাতা হইতে দেশে পাঠাইয়া দেন। মধ্যম সহোদর দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন, ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের কার্য্যে ছয় মাস প্রতিনিধি রাখিয়া, অন্যান্য ভ্রাতৃবৰ্গসমভিব্যাহারে দেশে অবস্থিতি করেন। কিয়দ্দিবস পরে জননীদেবীর শোকের কিছু লাঘব হইলে পর, অগ্রজ মহাশয় আমাদিগকে পুনর্বার কলিকাতা যাইবার আদেশ করেন।

 ঐ সময় অগ্রজ মহাশয়, সংস্কৃত-কলেজের কোন বন্দোবস্ত উপলক্ষে কথা রক্ষা না হওয়ায়, হঠাৎ কর্ম্ম ত্যাগ করেন। রিজাইনপত্র প্রাপ্ত হইয়া, কলেজের অধ্যক্ষ বাবু রসময় দত্ত ও শিক্ষাসমাজের সেক্রেটারি ডাক্তার ময়েট্ সাহেব, অগ্রজকে অনেক প্রকার উপদেশ প্রদান করিয়া, কর্ম্ম পরিত্যাগ করিতে নিবারণ করেন, এবং অন্যান্য আত্মীয় বন্ধুবান্ধবও বিশিষ্টরূপ হিতগর্ভ উপদেশ দেন; কিন্তু কাহারও কথা শ্রবণ করেন নাই। একারণ, অনেক আত্মীয় তৎকালে বলেন, “বিদ্যাসাগর! অতঃপর তুমি কি করিয়া দিনপাত করিবে?” তাহা শ্রবণ করিয়া তাঁহাদিগকে উত্তর করিলেন, “আলু, পটল