পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

অনুরোধ করেন। অগ্রজ মহাশয়, ময়েট্ সাহেবের অনুরোধপরতন্ত্র হইয়া, ব্যাঙ্ক সাহেবকে কয়েক মাস প্রত্যহ শিক্ষা দিতে যাইতেন। সাহেব, স্বল্পদিনের মধ্যেই বাঙ্গালা ও হিন্দী ভাষা ভালরূপ শিক্ষা করিলেন। কয়েক মাস পরে, ব্যাঙ্ক সাহেব মাসিক ৫০৲ টাকার হিসাবে একবারে কয়েক মাসের টাকা তাঁহাকে প্রদান করিতে উদ্যত হইলে, তিনি ঐ টাকা গ্রহণ করেন নাই। সাহেব, টাকা না লইবার কারণ জিজ্ঞাসা করায়, অগ্রজ বলেন, “আপনি বলিয়াছিলেন যে, আপনি ময়েট্ সাহেবের পরম আত্মীয়, আমিও তাঁহার আত্মীয়, এমত স্থলে আমি কি প্রকারে আপনার নিকট বেতন লইতে পারি?” চাকরি না থাকায় ক্রমশঃ ঋণগ্রস্ত হইতেছিলেন, তথাপি সাহেবের নির্ব্বন্ধাতিশয়েও, শ্রমলব্ধ টাকা গ্রহণ করিলেন না। অন্য লোক এরূপ অবস্থায় কদাচ উপস্থিত প্রচুর টাকা পরিত্যাগ করিতে পারিতেন না। বাল্যকাল হইতেই তাঁহার অর্থের প্রতি দৃষ্টি কম ছিল।

 এই সময়ে অগ্রজ, মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সহিত পরামর্শ করিয়া, সংস্কৃত-যন্ত্র নাম দিয়া একটি মুদ্রাযন্ত্র স্থাপন করেন। ৬০০৲ টাকায় একটি প্রেস ক্রয় করিতে হইবে; টাকা না থাকাতে তাঁহার পরমবন্ধু বাবু নীলমাধব মুখোপাধ্যায়ের নিকট ঐ টাকা ঋণ করিয়া, তর্কালঙ্কারের হস্তে দিলে, তর্কালঙ্কার প্রেস ক্রয় করেন। ঐ টাকা ত্বরায় নীলমাধব মুখোপাধ্যায়কে প্রত্যাৰ্পণ করিবার কথা ছিল। এক দিবস কথাপ্রসঙ্গে অগ্রজ, মার্শেল সাহেবকে বলেন যে, “আমরা একটি ছাপাখানা করিয়াছি, যদি কিছু ছাপাইবার আবশ্যক হয়, বলিবেন।” ইহা শুনিয়া সাহেব বলিলেন, “বিদ্যার্থী সিবিলিয়ানগণকে যে ভারতচন্দ্রকৃত অন্নদামঙ্গল পড়াইতে হয়, তাহা অত্যন্ত জঘন্য কাগজে ও জঘন্য অক্ষরে মুদ্রিত; বিশেষতঃ অনেক বর্ণাশুদ্ধি আছে। অতএব যদি কৃষ্ণনগরের রাজবাটী হইতে আদি অন্নদামঙ্গল পুস্তক আনাইয়া শুদ্ধ করিয়া ত্বরায় ছাপাইতে পার, তাহা হইলে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের জন্য আমি একশত পুস্তক লইব এবং ঐ এক শতের মূল্য ৬০০৲ শত টাকা