পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

পাঠ করিতেন। পর মাসে, মদনমোহন তর্কালঙ্কার মহাশয়, স্ত্রীশিক্ষা-বিষয়ক প্রবন্ধ লিখেন। ইহার পর, চৈত্রসংক্রান্তির সময় লোকে যে জিহবা বিদ্ধ করে ও পীঠ ফুড়িয়া চড়ক করিয়া থাকে, এবং মৃত্যুর পূর্ব্বে যে গঙ্গায় অন্তর্জলি করে, এই দ্বিবিধ কুপ্রথার নিবারণার্থে প্রবন্ধ লিখিবার জন্য দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন ও তৎকালীন সংস্কৃত-কলেজের সুলেখক ছাত্র মাধবচন্দ্র গোস্বামীর প্রতি ভার দেন।

 এই বৎসর অগ্রজ মহাশয়, শিক্ষাসমাজ কর্তৃক হিন্দু-কলেজ, হুগলি-কলেজ, কৃষ্ণনগর-কলেজ ও ঢাকা-কলেজের সিনিয়র ডিপার্টমেণ্টের ছাত্রগণের বাঙ্গালা-রচনার পরীক্ষক নিযুক্ত হন। ভারতবর্ষের স্ত্রীলোকগণকে লেখাপড়া শিক্ষা দেওয়া উচিত কি না? এই বিষয়ে তিনি প্রশ্ন দেন। সকল ছাত্র অপেক্ষা কৃষ্ণনগর কলেজের নীলকমল ভাদুড়ী, উক্ত প্রশ্নের সর্বোৎকৃষ্ট উত্তর লিখিয়াছিলেন। তজ্জন্য গবর্ণমেণ্ট তাঁহাকে একটি স্বর্ণমেডেল প্রদান করেন। উক্ত কয়েকটি বিদ্যালয়ের পারিতোষিক বিতরণকালে, প্রেসিডেণ্ট মহামতি ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন উপস্থিত থাকিয়া, ঐ সকল বিদ্যালয়ে স্ত্রীশিক্ষা-বিষয়ের সুদীর্ঘ বক্ততা করিয়া, সাধারণের মনোহরণ করিতেন এবং ঐ সকল বিদ্যালয়ের যে সকল ছাত্র ভাল পরীক্ষা দিয়াছিলেন, পারিতোষিক প্রদানসময়ে, তাঁহাদের রচনাও সর্ব্বসমক্ষে পাঠ করা হইয়াছিল। তদবধি সভাস্থ শ্রোতাগণের মধ্যে অনেক কৃতবিদ্য লোক, যাহাতে দেশে স্ত্রী-শিক্ষা প্রচলিত হয়, তদ্বিষয়ে আন্তরিক যত্ন করিতে লাগিলেন।

 সংস্কৃত-কলেজের সাহিত্যশাস্ত্রাধ্যাপক মদনমোহন তর্কালঙ্কার, সংস্কৃতকলেজ পরিত্যাগ করিয়া, মুরশিদাবাদের জজপণ্ডিতের পদে নিযুক্ত হইলে পর, কাব্যশাস্ত্রের শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। তৎকালীন এডুকেশন কৌন্সিলের সেক্রেটারি ডাক্তার ময়েট্ সাহেব, অগ্রজ মহাশয়কে ঐ পদে নিযুক্ত করিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিলে, অগ্রজ মহাশয় নানা কারণ দর্শাইয়া প্রথমতঃ অস্বীকার করেন; পরে, ময়েট্ সাহেব সবিশেষ যত্ন ও আগ্রহ প্রকাশ করাতে