পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরি।
৯১

গণকে উৎসাহ দিবার জন্য মধ্যে মধ্যে তৎকালীন গবর্নর জেনারলের পত্নী লেডী ডালহৌসী, বেথুন-সংস্থাপিত এই বিদ্যালয়ে আসিয়া কার্য্য পরিদর্শন করিতেন এবং ত্বরায় যাহাতে বিদ্যালয়ের উন্নতি হয়, তদ্বিষয়ে বিশিষ্টরূপ মনোযোগ দিয়াছিলেন।

 কলিকাতাস্থ দলপতিদের নিবারণে প্রথমতঃ কেহ কেহ স্বীয় দুহিতাগণকে শিক্ষার জন্য এই নবপ্রতিষ্ঠিত বালিকাবিদ্যালয়ে পাঠাইতে সাহস করেন নাই। অগ্রজ মহাশয়ের অনুরোধে বহুবাজারনিবাসী বাবু নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, বাবু হরপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বাবু রামগোপাল ঘোষ, বাবু ঈশানচন্দ্র বসু, তৎকালের সদর দেওয়ানী আদালতের প্রধান উকীল বাবু শম্ভুনাথ পণ্ডিত, পণ্ডিত তারানাথ তর্কবাচস্পতি, পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রভৃতি কয়েকজন কৃতবিদ্য ও সম্রান্ত লোক স্বীয় স্বীয় কন্যাগণকে শিক্ষার্থে বেথুনবালিকাবিদ্যালয়ে প্রেরণ করিতেন। উক্ত মহোদয়গণ দলপতিদের নিবারণেও ক্ষান্ত হইলেন না। এজন্য কলিকাতা ও পল্লিগ্রামস্থ সম্রান্ত দলপতিরা ঐক্য হইয়া, উহাঁদের সহিত সামাজিক ব্যবহার বন্ধ করিয়া দেন, এবং সংবাদপত্রেও তাঁহাদের যথোচিত দুর্নাম ঘোষণা করিয়াছিলেন। তাহাতেও তাঁহারা স্ব স্ব প্রাণসম দুহিতাগণকে বিদ্যালয়ে পাঠাইতে ক্ষান্ত হয়েন নাই। তৎকালে অগ্রজ মহাশয়ের কন্যা হয় নাই; তজ্জন্য অনেকে বলিত, “বিদ্যাসাগরের কন্যা থাকিলে, কখন তিনি ইহাঁদের মত গাড়ী করিয়া বেথুনস্কুলে পাঠাইতেন না। অপরকে উত্তেজিত করিয়া দিয়া নিজে বাহিরে থাকিয়া, সাহেবদের সুখ্যাতিভাজন হইতেছেন।” ‘ যে গাড়ীতে বালিকাগণকে বিদ্যালয়ে পাঠান হইত, ঐ গাড়ীতে ধর্মশাস্ত্র মনুসংহিতার এই বচনটা স্পষ্টাক্ষরে লেখা ছিল—

“কন্যাপ্যেয়ং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতি যত্নতঃ।”

 সমাজের ভয়ে অন্যান্য কৃতবিদ্য অনেক লোক স্ব স্ব দুহিতা, ভগিনী ও ভাগিনেয়ী প্রভৃতিকে বেথুনস্কুলে পাঠাইতে সাহস করিতেন না। বালিকা ঐ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নার্থে প্রবিষ্ট হইয়াছিল, তাহাদের মধ্যে কোন