পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

প্রচলিত হওয়া দুষ্কর হইত। তাঁহার যত্নের শৈথিল্য থাকিলে, কোন্‌কালে বেথুন-ফিমেল-স্কুল উঠিয়া যাইত।

 চেম্বর্স, ইংরাজী-ভাষায় মর‍্যাল ক্লাসবুক নামে যে পুস্তক প্রচারিত করিয়াছেন, বিদ্যাসাগর মহাশয় সন ১২৫৭ সালে, এতদ্দেশীয় বালকবালিকাগণের নীতিজ্ঞানার্থ নীতিবোধ নাম দিয়া, বাঙ্গালাভাষায় ঐ পুস্তকখানি অনুবাদ করিতে প্রবৃত্ত হন। প্রথমতঃ, পশুগণের, প্রতি ব্যবহার, পরিবারের প্রতি ব্যবহার, প্রধান ও নিকৃষ্টের প্রতি ব্যবহার, পরিশ্রম, স্বচিন্তা ও স্বাবলম্বন, প্রত্যুৎপন্ন-মতিত্ব, বিনয়, এই কয়েকটি প্রস্তাব অনুবাদ করিয়াছিলেন এবং প্রত্যেক প্রস্তাবের উদাহরণস্বরূপ যে সকল বৃত্তান্ত লিখিত হইয়াছে, তন্মধ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের কথাও তাঁহার অনুবাদিত; কিন্তু প্রিন্সিপাল-পদে নিযুক্ত হওয়ায় ও অন্যান্যরূপ কার্য্য়ে নিরন্তর ব্যাপৃত থাকায়, অনবকাশ-প্রযুক্ত তিনি তাহার পরমবন্ধু বাবু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের প্রতি নীতিবোধ প্রস্তুত করিবার ভারার্পণ করেন। তিনি অবশিষ্ট অংশ লিখিয়া, সন ১২৫৮ সালের ৪ঠা শ্রাবণ মুদ্রিত ও প্রকাশিত করেন।

 ঐ সালে মার্শেল সাহেব, সংস্কৃত-কলেজের জুনিয়র ও সিনিয়র উভয় ডিপার্টমেণ্টের পরীক্ষক নিযুক্ত হন। অন্যান্য বৎসর অপেক্ষা এ বৎসরের পরীক্ষার ফল উৎকৃষ্ট হইয়াছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সুনিয়মই ইহার কারণ। ঐ বৎসরের আশ্বিন মাসে পূজার অবকাশে অগ্রজ মহাশয়, বাবু প্রসন্নকুমার সর্ব্বাধিকারিকে সঙ্গে লইয়া বাটী যান। তথায় উভয়েই পুস্তক লইয়া শচীসরোবরের এক অশ্বথবৃক্ষের মুলে বসিয়া, পুস্তক-পাঠ ও কথোপকথন করিতেন। যে কয়েক দিবস বাটীতে অবস্থিতি করিতেন, সেই কয়েক দিন দরিদ্র লোকের বিলক্ষণ সুবিধা হইত; কারণ, তিনি তাহাদিগকে গোপনে কিছু কিছু দান করিতেন।

 গ্রামবাসীদের বাটীতে যাইয়া ও সবিশেষ অনুসন্ধান লইয়া, যাহার যেরূপ অভাব থাকিত, সাধ্যানুসারে তিনি তাহার সেই অভাব মোচন করিতেন।