পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
বিদ্যাসাগর।

দেওয়া হইত। সংস্কৃতকলেজে ইংরাজী শিক্ষাপ্রবর্তনের সময় ঐ বিদ্যালয়েও ইংরাজী শিক্ষা প্রবর্তিত হইয়াছিল। ঠাকুরদাস কি জানিতেন যে, তাহার পুত্র ভবিষ্যজীবনে টোলের পরিবর্ত্তে গ্রামে উচ্চশ্রেণীর ইংরাজী বিদ্যালয় স্থাপিত করিতে পরিবেন? ঈশ্বরচন্দ্র যে বৃত্তির টাকা পাইতেন, পরে পিতা তাহার সমস্ত লইতেন না।

  ঈশ্বরচন্দ্র বৃত্তির টাকায় হস্তলিখিত পুঁথি ক্রয় করিয়াছিলেন। এই সব পুঁথি তাহার লাইব্রেরীতে বিদ্যমান ছিল। কেবল তাহাই নহে, তিনি বাল্য কাল হইতে পরদুঃখমোচনে ব্রতী হইয়াছিলেন। সেই ক্ষুদ্র বুকখানি অনন্তব্যাপিনী; কিন্তু দয়া যেমন, উপায় তো তেমন নহে; তবুও যে কোন উপায়ে যথাশক্তি দানে, দীনের দুঃখোদ্ধারে তিনি প্রাণান্তপণ করিতেন। অবশিষ্ট যে টাকা থাকিত, তিনি সেই টাকায় জল খাইতেন। জল খাইবার সময় যে সকল বালক তাহার নিকটে থাকিত, তিনি তাহাদিগকেও জল খাওয়াইতেন। কাহারও ছেঁড়া কাপড় দেখিলে, নিজের হাতে পয়সা না থাকিলেও, দরওয়ানের নিকট ধার করিয়া তিনি তাহাদের কাপড় কিনিয়া দিতেন। বাসায় কেহ অসিলে, তৎক্ষণাৎ তিনি তাহাকে জল খাওয়াইতেন। সে ভাবিত, ঈশ্বরচন্দ্র বড় মানুষের ছেলে; কিন্তু ঈশ্বর কিসে বড়, তাহা বুঝিত না। সবাই কি বুঝে, বাগানের ছোট চারা আম গাছটী কিসে অমৃতময় সুমিষ্ট আম প্রদান করে। কোন সমবয়স্ক বালকের পীড়া হইলে, ঈশ্বরচন্দ্র সকল কার্য্য পরিত্যাগ করিয়া, তাহার সেবা-শুশ্রুষা করিতেন। কাহারও কোন সংক্রামক পীড়া হইলে, অপর কেহ তাহার নিকট যাইত না; তিনি কিন্তু আম্লানবদনে ও অকুষ্ঠিতচিত্তে তাহার মলমুত্রাদি পরিষ্কার করিতেন।