পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
বিদ্যাসাগর।

গণিত, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়েও সেইরূপ ছিল। অধুনা বিকট বিমিশ্র শিক্ষার বাঁধাবাঁধিতে কোন বিষয়ে প্রকৃষ্ট ব্যুৎপত্তিলাভের সম্ভাবনা থাকে না। তখন সাহিত্যে যাঁহার প্রবৃত্তি থাকিত, রচনায়ও তাহার অনুরাগ দেখা যাইত। সাহিত্যাধ্যাপকগণও তদ্বিষয়ে যথেষ্ট যত্নশীল হইতেন। যে ছাত্র অল্পের ভিতর বহু ভাবময় রচনা লিখিতেন, তিনি প্রশংসিত হইতেন। একবার আমাদের ‘পরিশ্রম’ সম্বন্ধে ইংরেজী রচনার বিষয় ছিল। আমি এ সম্বন্ধে পনর ষোল ছত্র মাত্র লিখিয়াছিলাম; কিন্তু এই পনর ষোল ছত্রের জন্যও পুরস্কার পাইয়াছিলাম; পরন্তু এই সময় হইতে আমি অধ্যাপক ও পরীক্ষকের প্রীতিপাত্র হইয়াছিলাম।”

 সংস্কৃত কলেজে রচনার জন্য পরিতোষিকের ব্যবস্থা থাকিলেও ঈশ্বরচন্দ্র রচনায় বড় অগ্রসর হইতেন না; তাঁহার বিশ্বাস ছিল,— “আমরা সংস্কৃত ভাষায় রীতিমত রচনা করিতে অসমর্থ। যদি কেহ সংস্কৃত ভাষায় কিছু লিখিতেন, ঐ লিখিত সংস্কৃত প্রকৃত সংস্কৃত বলিয়া আমার প্রতীতি হইত না।”[১]

 ঈশ্বরচন্দ্রের এ বিশ্বাস চিরকাল দৃঢ়বন্ধ ছিল। তাহার কার্য্যাবস্থায় এক জন কোন বিষয় সংস্কৃতে লিখিয়া, তাঁহাকে দেখাইতে গিয়াছিলেন। তিনি তাহার সংশোধন করিয়া দেন। তাঁহার সংশোধন-প্রণালী দেখিয়া রচয়িতা চমৎকৃত হইয়াছিলেন। তিনি বলেন,—“আপনি এমন সুন্দর সংস্কৃত লেখেন, তবে আপনি যে সকল সংস্কৃত গ্রন্থ মুদ্রিত করিতেছেন, তাহার মুখবন্ধে বা বিজ্ঞাপনে বাঙ্গালা লেখেন কেন?” এতদ্বৃত্তরে বিদ্যাসাগর মহাশয় একটু

  1. বিদ্যাসাগর কর্ত্তৃক প্রকাশিত “সংস্কৃত রচনা"। প্রথম পৃষ্ঠা।