পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজকৃষ্ণ বাবুর পরিচয়
১৩৩

অনর্থক সময় নষ্ট হইবে। বিদ্যাসাগর মহাশয় রাজকৃষ্ণবাবুকে বলেন,—“দেখ, আমি যখন মুগ্ধবোধ মুখস্থ করি, তখন ইহার এক বর্ণও বুঝিতে পারি নাই; পরে যখন সংস্কৃত সাহিত্যে অগ্রসর হইলাম, তখন ইহার অর্থ গ্রহণ করিতে সমর্থ হই। তোমাকে মুগ্ধবোধ মুখস্থ করাইয়া সংস্কৃত শিথাইতে হইলে এ বয়সে সংস্কৃত শিখা দায় হইবে। অতএব তোমাকে একটা সহজ উপায়ে ব্যাকরণ শিথাইতে হইবে।” এই বলিয়। তিনি সে দিন রাজকৃষ্ণ বাবুকে বিদায় দেন। রাজকৃষ্ণ বাবুকে বিদায় দিয়া তিনি ব্যাকরণ শিখাইবার একটা সরল পথের অন্বেষণে প্রবৃত্ত হন।

 পর দিন রাজকৃষ্ণ বাৰু আসিয়া দেখেন, তাঁহার জন্য ব্যাকরণ শিখিবার সরল ও সহজ উপায় উপস্থিত। চারি ‘তা’ ফুলস্কেপ কাগজে বাঙ্গালা অক্ষরে, বর্ণমালা হইতে ধাতু প্রত্যয়াদি পর্যন্ত মুগ্ধবোধের সারাংশ লিখিত। রাজকৃষ্ণ বাবু দেখিয়া অবাক হইলেন। রাজকৃষ্ণ বাবু আমাদিগকে বলিয়াছেন,—“ইহাই উপক্রমণিকা ব্যাকরণের সুত্রপাত। উপক্রমণিকা ব্যাকরণের পূর্ব্বাভাস এই খানেই তাঁহার মস্তকে প্রবেশ করে। আমি সেই ফুলস্কেপ কাগজে লিখিত ব্যাকরণের সারাংশ এবং তাৎকালিক ব্যাপটিষ্ট প্রেসে মুদ্রিত একথান সংস্কৃত গ্রন্থ পড়িতে আরম্ভ করি। মাস দুই তিন পড়িয়া আমি ব্যাকরণের আভাস কতকটা আয়ত্ত করিয়া লই। তিন চারি মাসের পর আমি মুগ্ধবোধ পড়িতে আরম্ভ করি।” বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শিক্ষা দিবার প্রণালীর গুণে এবং স্বকীয় অসাধারণ অধ্যবসায়ে ও পরিশ্রমবলে রাজকৃষ্ণ বাৰু ছয় মাসের মধ্যে মুগ্ধবোধ পড়া সাঙ্গ করেন। পরে তিনি কাব্যাদিপাঠে প্রবৃত্ত হন।