পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
বিদ্যাসাগর।

অতিরিক্ত লোক ও প্রায়ই দুই বেলা আহার পাইত। বাসার সকলকেই পর্যায়ক্রমে রন্ধন করিতে হইত। বিদ্যাসাগর মহাশয় ও রন্ধন করিতেন। তা না করিলে কি ৩০৲ ত্রিশ টাকায় এতগুলি লোকের অন্নসংস্থান হয়? বিদ্যাসাগরের নিকট কি শিথিবার বস্তু ছিল ও আছে, পাঠক! তাহা বুঝিতে কি এখনও বাকি রহিল? ৫০৲ পঞ্চাশ টাকা-বেতনভোগী বাঙ্গালীর মধ্যে এরূপ কৃচ্ছসাধ্য ব্যবস্থা কয় জনের দেখিতে পাও?

 এই সময়ে মার্সেল্ সাহেব সংস্কৃত কলেজের “জুনিয়র্” ও “সিনিয়র্” পরীক্ষার পরীক্ষক হন। বিদ্যাসাগর মহাশয়কে সংস্কৃত প্রশ্ন প্রস্তুত করিয়া সাহেবের সাহায্য করিতে হইত। ব্যাকরণ, কাব্য, স্মৃতি, বেদান্ত প্রভৃতি সকল প্রশ্ন তিনি নিজেই লিখিয়া দিতেন। ভাবি তাই একটা মানুষ এত কাজ কি করিয়া করিতেন? ভাবি, আর মুহুর্তে মুহুর্তে বিস্ময়বিমূঢ় হইয়া পড়ি। কিন্তু আবার যখন বিলাতের বিখ্যাত রাজনীতিজ্ঞ কবডেনের কথা মনে হয় —“আমি ঘোড়ার মতন এক মুহূর্ত্ত বিশ্রাম না করিয়া খাটিতেছি”; যখন ভাৰি,—“রোমক সম্রাট্ সীজর্ আল্পস্ হইতে সৈন্য সঞ্চালন করিবার সময় লাটীন অলঙ্কারশাস্ত্র সম্বন্ধে প্রবন্ধ লিথিয়াছিলেন,”—তখনই মনকে প্রবোধ দিই, শক্তিশালী ব্যক্তির ইহ জগতে অসাধা কি? এই গুণে তো পগুর উপর মনুষ্যের রাজত্ব; সামান্যের উপর অসামান্যের প্রভুত্ব।


    মুখে শুনিয়াছি, যখন সুকিয়া ষ্ট্রীটে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বাসা ছিল, তখন কতকগুলি আত্মীয় লোক তাঁহার প্রাণনাশকল্পে ভয়ানক ষড়যন্ত্র করিয়াছিল। তখন ঐ অনুগত ভৃত্য শ্রীরামের কল্যাণেই তিনি আত্মরক্ষায় সমর্থ হন।