পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
বিদ্যাসাগর

বাড়ী যাও।” এই কথা বলিয়া তিনি দ্রুতপদে তীরবেগে চলিতে আরম্ভ করিলেন। শ্রীরাম সঙ্গ লইতে পারিল না। ক্রমে বিদ্যাসাগর মহাশয় দামোদর নদের তীরে উপস্থিত হইলেন। বিষম বর্ষায় দামোদরে খরতর একটানা স্রোত,—‘দুকুল-ভরা',—‘কানে কান জল!'

 গ্রীষ্মকালে দামোদরে সামান্য-মাত্র জল থাকে; এমন কি হাঁটিয়াই পার হওয়া যায়। বর্ষাকালে কিন্তু ইহা প্রলয়ঙ্করী সংহারমুর্তি ধারণ করে। আজ সেই দামোদর বাত্যাবিক্ষোভিত বারিধিবৎ ভীষণ সংহারমূর্ত্তি ধারণ করিয়াছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় দেখিলেন,— পারাপারের নৌকা অন্য পারে। তাঁহার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পিতা, ভ্রাতা, ভগিনী, যুবতী বনিতা[১]—সবই আছে; আজ কিন্তু বিদ্যাসাগর ভাবিতেছেন,—“তাঁহার কেহই নাই –আছেন কেবল,—“জননী”। বিদ্যাসাগর বাহ্যজ্ঞান শূন্য;— অন্তরে বাহিরে কেবল সেই অন্নপূর্ণা মাতৃ মূর্ত্তি! অনন্ত বিশ্ব-ব্যোম ব্যাপিনী মাতৃ-মূর্ত্তি। তিনি আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। নৌকার অপেক্ষা না করিয়া, তিনি উচ্চকণ্ঠে ‘মা, মা' বলিয়া ডাকিয়া দামোদরের জলে ঝাঁপ দিলেন।

 দেখিতে দেখিতে বিদ্যাসাগর সাঁতার দিয়া দামোদর পার হইয়া গেলেন। বিদ্যাসাগর কি নিজ-বলে সে দুর্জ্জয় দামোদর পার হইলেন? মানুষের শক্তিতে কি তাহা কুলায়? এ ব্যাপার দেখিয়া মনে হয়, মাতৃভক্তের কাতর ক্রন্দনে স্থির থাকিতে না পারিয়া, স্বয়ং মাতৃরূপিণী মহামায়া বিদ্যাসাগরকে বুকের ভিতর

  1. ১৮৩৬ কি ৩৭ খৃষ্টাব্দে বা ১৮৪৪ কি ১৮৪৩ সালের ফাল্গুন মাসে বিদ্যাসাগরের বিবাহ হইয়াছিল।