পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাতৃ ভক্তি।
১৫৫

করিয়া লইয়া, সেই দুরন্ত দামোদর পার করিয়া দিয়াছিলেন। পার হইয়া বিদ্যাসাগর আবার চলিতে আরম্ভ করিলেন। পথে তাঁহাকে দ্বারকেশ্বর নদ সাঁতরাইয়া পার হইতে হয়। মাঠের মাঝে ‘কুড়ান খালের' নিকট সন্ধ্যা উপস্থিত হয়। এই খানে ভয়ানক দস্যুর ভয় ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় অকুতোভয়ে মাতৃপদ স্মরণ করিয়া চলিতে লাগিলেন। রাত্রি ৯ নয়টার সময় তিনি বাড়ীতে উপস্থিত হন। উপস্থিত হইযা দেখেন, বর বিবাহ করিতে গিয়াছে; মা কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ করিষা, অনাহারে পড়িয়া আছেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় এক বার উচ্চ কণ্ঠে ডাকিলেন,—“মা! মা! আমি এসেছি।” বিদ্যাসাগরের কণ্ঠস্বর বুঝিয়া মা ঘরের বাহিরে আসিয়া ক্রন্দন করিতে লাগিলেন। তখন মা ও কাঁদেন, পুত্র ও কাঁদেন। উভয়েই অনাহারে ছিলেন। উচ্ছ্বাস-বেগের হ্রাস হইলে পর, মাতা ও পুত্র একত্র আহার করিতে বসেন।

 বহুতর বিদেশীয়-গ্রন্থ পাঠক বহুতর মাতৃভক্ত বিদেশীয় পুরুষের নাম,শুনিয়া থাকেন। জনসন্, জেনারল্ ওযাশিংটন্ প্রভূতির মাতৃভক্তি অতুলনীয় বলিয়া পরিকীর্ত্তিত; কিন্তু বল দেখি, বাঙ্গালী বিদ্যাসাগবের এ মাতৃভক্তির তুলনা হয কি? গুনিয়াছি, রোমক-বীর সম্রাট্ সিজর্, যখন ইংলণ্ড-বিজয়-মানসে সাগর পর হইবার উপক্রম করেন, তখন ভয়ানক ঝড়-বৃষ্টি উপস্থিত হইয়াছিল। তাঁহাকে জাহাজে উঠিতে অনেকেই নিষেধ করেন; কিন্তু তিনি কাহারও নিষেধ শুনেন নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয় যখন দামোদরে ঝাঁপ দিবার উপক্রম করেন, তখন নিকটস্থ জনকয়েক লোক তাঁহাকে পাগল ভাবিয়া, সে দুষ্কর