পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
বিদ্যাসাগর।

প্রমাণ স্বরূপ পণ্ডিত রামগতি ন্যায়রত্ন মহাশয় একটি রহস্যজনক দৃষ্টান্ত দিয়াছেন,—

 “এক সময়ে কৃষ্ণনগর রাজবাটীতে স্থানীয় কোনও বিষয়ের বিচার হয়। সিদ্ধান্ত স্থির হইলে একজন পণ্ডিত তাহা বাঙ্গালায় লেখেন। সেই রচনা শ্রবণ করিয়া একজন অধ্যাপক অবজ্ঞা প্রদর্শনপূর্ব্বক কহিয়াছিলেন,—এ কি হয়েছে? এ যে বিদ্যাসাগরী বাঙ্গালা হয়েছে। এ যে অনায়াসে বোঝা যায়।”

 ভাষা পুষ্টিকারিত্বের কৃতিত্ব বিদ্যাসাগরের অনুবাদে আরম্ভ। বিলাতের জন্‌সন্, মিল্টন্, স্কট্,কার লাইল্ প্রভৃতি প্রায় সকল প্রতিপত্তিশালী লেখককে প্রথম প্রথম অনুবাদে হাত পাকাইতে হইয়াছিল। অনুবাদ হউক, “বাসুদেব-চরিতে” উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় আছে। প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধ বাঙ্গালায় কিরূপে অবিকল সুন্দর অনুবাদ করিতে হয়, বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহার পথ দেখাইলেন। তবে “বাসুদেব-চরিতের” অনুবাদের ভাষা ও লিপিভঙ্গী অপেক্ষা তাঁহার পরবর্ত্তী অনুবাদ ও প্রবন্ধাদির লিপিভঙ্গী যে অধিকতর পরিমার্জ্জিত ও বিশুদ্ধীকৃত হইয়াছে, তৎপক্ষে সন্দেহ নাই। Voyage to Abysinia (ভয়েজ টু আবিসিনিয়া) নামক গ্রন্থের জন্‌সন্ সর্ব্বপ্রথম যে গদ্যানুবাদ করিয়াছিলেন, তাহার লিপিপদ্ধতির সহিত তৎকৃত পরবর্ত্তী পুস্তকাদির লিপি পদ্ধতির তুলনা করিলে যেমন তারতম্য অনুভূত হয়, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পরবর্ত্তী গ্রন্থাদির লিপিপদ্ধতির সহিত এ অনুবাদের লিপিপদ্ধতির তুলনা করিলে তেমনই তারতম্যবোধ হইবে।

 বঙ্গভাষার যতই উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি হউক, বঙ্গবাসীকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট চিরঋণী থাকিতে হইবে। তাঁহার