পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৬
বিদ্যাসাগর।

চন্দ্রের সঙ্গে তাঁহার কোন কোন বিষয়ে, বিশেষতঃ বিধবা-বিবাহ সম্বন্ধে মতের মিল না থাকিলেও, তিনি ঈশ্বরচন্দ্রকে প্রকৃত বাঙ্গালা কবি বলিয়া শ্রদ্ধা করিতেন; পরন্তু তাঁহার রচনা প্রকৃত বাঙ্গালা কবিতার আদর্শ ভাবিয়া তাঁহার কবিতাকে আদর করিতেন। ঈশ্বরচন্দ্রের কবিতায় ইংরেজি ভাব বা ছায়া থাকিত না, অথচ তাঁহার রচনার ভাষা তাঁহার নিজস্ব - বাঙ্গালা-ভাষার নিজস্ব। বাঙ্গালা ভাষার - বাঙ্গালী জাতির ইহা গৌরবের বিষয় বলিয়াই, বিদ্যাসাগর মহাশয় ঈশ্বরচন্দ্রের কবিতার খ্যাতি প্রচার করিতেন। ঈশ্বরচন্দ্রের ন্যায় কবি রসিকচন্দ্রের কবিতায়ও তিনি পরম প্রীতি প্রদর্শন করিতেন। রসিকচন্দ্র প্রকৃত বাঙ্গালী-কবিশ্রেণীর শেষ কবি। রসিকচন্দ্রের দেহান্তরে খাঁটি বাঙ্গালী কবিশ্রেণীর অবসান হইবে বলিয়াও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বিশ্বাস ছিল। রসিকচন্দ্রের সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের, যথেষ্ট বন্ধুত্ব জন্মিয়াছিল। রসিকচন্দ্রের কোন কোন কবিতা পুস্তক বিদ্যাসাগর মহাশয়ের যত্নে পাঠ্য-পুস্তকরূপে পরিগণিত হইয়াছিল। রসিকচন্দ্রের কবিতা তিনি এত ভাল বাসিতেন যে, আপনার দৌহিত্রদিগকেও তদ্রচিত অনেক কবিতা মুখস্থ করাইতেন। রসিকচন্দ্র আধুনিক সাহিত্য-সেবকদিগের মধ্যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট যেরূপ উৎসাহ পাইতেন, তেমন আর কাহারও নিকট পাইতেন না। শ্রীরামপুর বড়া গ্রামে রসিকচন্দ্রের নিবাস ছিল। কলিকাতায় আসিলে তিনি সর্ব্বাগ্রে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত সাক্ষাৎ করিতেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ও তাঁহার যথেষ্ট আদর করিতেন। রসিকচন্দ্রের সহিত আমাদের সাক্ষাৎ হইলে, তিনি শতমুখে বিদ্যাসাগরের সহৃদয়তা ও বদান্যতার কীর্ত্তন