পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছাত্রগ্রীতি।
২৩৯

কর্ত্তব্যানুরোধে তেমনই কঠোর হইতেন। বলা বাহুল্য, স্কুলের বা কলেজের অধ্যাপক, শিক্ষক ও কর্ত্তৃপক্ষের এইরূপ কথন কঠোরতা, কখন বা কোমলতা, কর্ত্তব্যানুষ্ঠানে প্রয়োজনীয়। কারুণ্য যাঁহার স্বভাব সিদ্ধ, কঠোরতা তাঁহার কিন্তু অল্পক্ষণস্থায়ী। বিদ্যাসাগর মহাশয় কর্ত্তব্যে কঠোর হইতেন বটে, কিন্তু কঠোরতার কারণ দূর হইলেই, কারুণ্যে ভাসিয়া যাইতেন। তখন সেই মুখে কি যেন একটা শোভনীয় সুন্দর স্বৰ্গীয় শ্রীর আবির্ভাব হইত। প্রসঙ্গক্রমে এইখানে তাঁহার উত্তরকালীন্ ছাত্রপ্রীতির একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ করি।

 একবার তিনি স্ব-প্রতিষ্ঠিত “মেট্রোপলিটান কলেজের শ্যামবাজারস্থ শাখা-বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রদিগকে অবাধ্যতা দোষের জন্য তাড়াইয়া দেন। কর্ত্তব্যানুরোধে দ্বিতীয় শ্রেণী একবারে উঠাইয়া দিতে হইয়াছিল। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রগণ বিতাড়িত হইয়া পর দিন প্রাতে তাঁহার বাদুড়-বাগানস্থিত বাটীতে যাইয়া উপস্থিত হয় এবং কাতরকণ্ঠে করযোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে। বালকদিগের কোমল-করুণ মুখ দেখিয়া দয়ার্ণব বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সেই দুরন্ত ক্রোধ মুহূর্ত্তে অন্তহিত হইল। তখন তিনি সস্নেহ-সম্ভাষণে বলিলেন,—“যা, আর এ কাজ করিস না; এবার মাপ করলেম।” ছাত্রগণ এই কথা শুনিয়া আশ্বস্ত হইল। তখন বেলা বারটা। বাড়ী ফিরিবার জন্য ৰিদায় লইয়া ঠিক সিঁড়িতে নামিবার সময় তাহদের একজন হাসিতে হাসিতে অনুচ্চ শব্দে বলিল,—কি কঠোর প্রাণ! এতখানি বেলা হ'ল তা বললে না, একটু জল খেয়ে যা।” কথাটা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কানে গেল। তিনি তাড়াতাড়ি সিঁড়িতে নামিয়া অসিয়া