পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৪
বিদ্যাসাগর।

যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছিলেন। বীটন্‌ সাহেব স্ব-প্রতিষ্ঠিত বালিকাবিদ্যালয়ে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে অবৈতনিক সেক্রেটরী করেন। মেয়েদের লেখাপড়া শিখান কর্ত্তব্য, এ ধারণা ছিল বলিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় সে সম্বন্ধে প্রাণপণে পরিশ্রম করিয়াছিলেন। বিরুদ্ধবাদীর সহিত তাঁহাকে অনেক বাগবিতণ্ডা করিতে হইয়াছিল। তাঁহার এ ধারণার অন্যতম কারণ, ধর্ম্মশাস্ত্রের একটী শ্লোক,—

 “কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষর্ণীয়াতিযত্নতঃ।”

 ইহাতে তিনি বুঝিয়াছিলেন, মেয়েদের লেখাপড়া শিখান

    এবং অন্যান্য মিসনরীরা অনেকটা কৃতিত্বভাগী। কোন কোন হিন্দু, খৃষ্টান হওয়ায়, হিন্দু ও খৃষ্টানের মধ্যে সদ্ভাবের খর্ব্বতা হয়। এই জন্য বালিকাবিদ্যালয়ের অভাব হয়। এই অভাব দূরীকরণ উদ্দেশেই বীটন্‌ সাহেব, প্রথমে সুকিয়া স্ট্রীটের বাবু দক্ষিণাচরণ মুখোপাধ্যায়ের বৈঠক-খানায় বালিকা-বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরে গোলদীঘির দক্ষিণ কোণে হেয়ার সাহেবের স্থুলগৃহে ইহার কার্য্যারম্ভ হয়। পরে ইহা সীমুলিয়াস্থ বর্ত্তমান বাটীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। বীটন্‌ সাহেব সহৃদয় সম্ভ্রান্ত লোক ছিলেন। ফলে যাহাই হউক, তাঁহার বিশ্বাস ছিল, হিন্দু স্ত্রীলোকদিগকে লেখা পড়া শিখান, হিন্দুসমাজের উন্নতিসাধনের একটা প্রধান উপায়। যাহাতে তৎপ্রতিষ্ঠিত স্কুলে কোনরূপে খৃষ্টানী ভাব সংপৃক্ত না হয়, ইহাই তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল। এই সকল বিশ্বাসে তিনি এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন।
     বাঙ্গালী যাহাতে বাঙ্গালা ভাষার অনুশীলন করে, তৎপক্ষে বীটন্‌ সাহেবের সবিশেষ যত্ন ও চেষ্টা ছিল। ইহা তাঁহার সহৃদয়তার পরিচায়ক নহে কি? বালিকা বিদ্যালয়ের সৃষ্টি ও পুষ্টিসাধনে ব্রাহ্মেরাও অনেকটা সহায় হইয়াছিলেন। বালিকা বিদ্যালয়ের পুষ্টিতত্ত্বের বিস্তৃত বিবরণ যাঁহারা জানিতে চাহেন, তাঁহারা শ্রীযুক্ত ঈশানচন্দ্র বসু-লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করুন। ইহা ১২৯৯ সালের ফাল্গুন মাসে, ১৩০০ সালের মাঘ ও ফাল্গুন মাসে এবং ১৩০১ সালের ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে নব্যভারতে প্রকাশিত হইয়াছে।