তিনি যে মুক্তিমতী দয়ার পূর্ণ পুরুষকার। হৃদয়-রলে-“বিদ্যাসাগর” বঙ্গের বিরাট পুরুষ।
এক জন বড় লোক হইলে, সমগ্র দেশ বা জাতি বড় বলিয়া সম্মানিত হয়। মার্কিণ গ্রন্থকার দার্শনিক এমারসন বড় লোকদের কথায় বলিয়াছেন,—
“The race goes with us on their credit.”
কলুষময় কলিকালে, দানে পুর্ণ “সারিকতা” সুদুর্লভ; বিদ্যাসাগরের দানে কিন্তু সাত্ত্বিকতার পূর্ণ বিকাশ। তাঁহার “বিধবা-বিবাহ” প্রচলন-প্রক্রিয়া সম্বন্ধে হিন্দু-সাধারণে একমত হইতে পারে নাই সত্য, কিন্তু তাঁহার দয়া-প্রণোদিত দানের সাত্ত্বিকতা কেহ অস্বীকার করিতে পারিবেন না। দানে বিদ্যাসাগর শাস্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করিয়াছেন। শাস্ত্রে আছে,—
“দাতব্যমিতি যদ্দানং দীয়তেছনুপকারিণে।
দেশে কালে চ পাত্রে তদানং সাত্ত্বিকং স্মৃতম্।”
দান করিতে হইবে, ইহা মনে করিয়া দেশ কাল পত্র বিবেচনায়, “অপকারীকেও যে দান করা যায, তাহাকে সাত্ত্বিক দান কহে।”
এরূপ সাত্ত্বিকভাবাপন্ন দানের পরিচয় বিদ্যাসাগরের জীবনবৃত্তান্তে পুনঃ পুনঃ পাইবেন। বিদ্যাসাগর দান করিতেন, জানিতেন কেবল দাতা ও গ্রহীতা। দানের পৌরুষ-প্রকাশে তাঁহার প্রবৃত্তি ছিল না। তিনি দান করিতেন, নামের জন্য নহে। দরিদ্রের সেবা এবং রুগ্নের শুশ্রুষা কেবলমাত্র তাহার অকাম-কল্পিত, নিত্য ক্রিয়া ছিল। দেনার দায়ে ঋণী জেলে যাইতে যাইতে পথে