পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বোধোদয়।
২8৯

কার্য্য হইয়াছি বলিতে পারি না।” যত্ন ঠিক সফল হয় নাই। বোধে দয়ের ভাষা স্থানে স্থানে এইরূপ,—“ঔজ্জ্বল্য ব্যতিরিক্ত”; “নূনাধিক্যবশত:”; “গম্ভীর শব্দজনক”; “ইয়ত্তা করা দুঃসাধ্য”; “উজ্জ্বলতা অনুসারে তারতম্য” ইত্যাদি। এক এক স্থলে বোধোদয়ের পরিভাষিক শব্দ প্রয়োগ সমাক্‌ হয় নাই। পদার্থ শব্দ ধরুন। বোধোদয়ে ইতস্তত: পরিদৃশ্যমান বস্তু সমুদয় পদার্থ আখ্যা পাইয়াছে। পদার্থ শব্দের এরূপ অর্থগ্রহ বড় সঙ্কীর্ণ। সংস্কৃত দর্শনে যাই কিছু শব্দবাচ্য, তাহাই পদার্থ। জাতি, গুণ, অধিক কি অভাবও পদার্থ।

 পক্ষান্তরে, জন্তু শব্দের প্রয়োগস্থল বড় বিস্তীর্ণ হইয়াছে। বোধোদয়ের মতে পক্ষী, মৎস্য, কীট, পতঙ্গ সকলই জন্তু। আমরা এখন জন্তু শব্দ এরূপ অর্থে ব্যবহার করি না। জীব বা প্রাণী শব্দ প্রয়োগ করিয়া থাকি। বোধোদয়ে আছে জন্তুগণ মুখ দ্বারা আহার গ্রগুণ করিয়া প্রাণ ধারণ করে। জন্তু অর্থে যদি প্রাণী হয়, তবে এ কথা ঠিক নহে, কারণ এক এক প্রাণীর মুখ নাই; অথচ সে সজীব।

 বোধোদয়ে অনেক বিষয় শিখাইবার প্রয়াস হইয়াছে। প্রাণিতত্ত্ব, নীতি, বিজ্ঞান, দর্শন, অঙ্ক, ব্যাকরণ ইত্যাদি। বিজ্ঞান ও দর্শনের যে অংশ বোধোদয়ে শিক্ষণীয়, তাহা প্রায় উপযোগী, কিন্তু স্থানে স্থানে এরূপ কথা আছে যে, তাহা শিশুবুদ্ধির অধিগম্য মহে। যথা –চন্দ্রসূর্য্য জোয়ার-ভাঁটার কারণ; শুক্ল ও কৃষ্ণ বর্ণ নহে; কর্ণপটাহে শব্দের প্রতিঘাত ইত্যাদি। দুই একটা কথা বোধ হয়, আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত নহে; যথা,—স্বপ্ন সকল অমূলক চিন্তামাত্র; অভিজ্ঞতা জন্মিলে হিতাহিত বিবেচনা

৩২