পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শকুন্তলা।
২৭৫

পংক্তি পর্য্যন্ত। ৩য় পরিচ্ছেদে প্রথমাবিধি ১০ পংক্তি। স্থূলতর এইগুলি দেখিলাম। নাটকের গৌরবরিক্ষার্থে যাহা লেখা হয়, তাহা নাটকেই ভাল লাগে, এমন বিষয় অনেক পরিত্যক্ত হইয়াছে। দুই একটী দেখাই,—“যদালোকে সূক্ষ্মং—” ইত্যাদির অনুবাদ। ষষ্ঠ অঙ্কে “মিশ্রকেশীর অবতারণা ইত্যাদি।” অনুবাদের কৃতিত্ব বুঝাইবার জন্য দুই একটী দৃষ্টান্ত দিলাম,—

“নীবারাঃ শুকগর্ভকোটরমুখভ্রষ্টান্তরূণামধঃ
প্রসিগ্ধাং ক্কচিদিঙ্গুলীফলভিদঃ সূচ্যন্তু এবোপলাঃ॥
বিশ্বাসোপগমাদভিন্নগতয়ঃ শব্দং সহন্তে মৃগা-
স্তোয়াধারপথাশ্চ বল্কশিখাখানিস্যন্দরেখাস্কিতাঃ॥”
 অভিজ্ঞানশকুন্তলং প্রথমোঙ্কঃ।

 অনুবাদ,—“কোটবস্থিত শুকের মুখভ্রষ্ট নীবার সকল তরুতলে পড়িয়া রহিয়াছে; তপস্বীরা যাহাতে ইঙ্গুলীফল ভাঙ্গিয়াছেন, সেই সকল উপলখণ্ড তৈলাক্ত পতিত আছে; ঐ দেখ, কুরুভূমিতে হরিণশিশু সকল নির্য়ভচিত্তে চরিয়া বেড়াইতেছে এবং যজ্ঞীয় ধূমে সমাগমে নব-পল্লব সকল মলিন হইয়া গিয়াছে।”

 কি সুন্দর মধুর অনুবাদ। এমন সুন্দর অনুবাদ সর্ব্বত্রই। এ অনুবাদের তুলনা নাই। অভিজ্ঞান-শকুন্তলের সংস্কৃত যেমন মধুর, এই শকুন্তলার বাঙ্গালা তেমনই মধুর। এক কথায় বলি, অভিজ্ঞানশকুন্তলা পড়িয়া যাহা বুঝি নাই, ইহাতে তাহা বুঝিয়াছি। শকুন্তলার দুষ্মন্তভবনে গমন কালে, শকুন্তলা, মহর্ষি কণ্ব ও সখিদ্বয়ের শোকভাব এমনই সুন্দর রূপে লিখিত হইয়াছে যে, পড়িতে পড়িতে চক্ষের জলে বুক ভাসিয়া যায়। মহর্ষি কণ্বের মর্ম্মস্পর্শিনী,—বৈক্লব্য মমতাবদীদৃশমিদং——কি মর্ম্মান্তিক করুণভাবে অনুবাদিত হইয়াছে।