পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৬
বিদ্যাসাগর।

দুই এক স্থানে পরিবর্ত্তনে অসাবধানতা ঘটিয়াছে। এক স্থানের পরিহারে হিন্দু-সন্তানের আক্ষেপ করিবার কথা আছে।

 শকুন্তলা ও দুষ্মন্তের সন্মিলনসময়, গৌতমী যখন শকুন্তলাকে অসুস্থ ভাবিয়া দেখিতে আসেন, তখন রাজা সরিয়া গিয়া আত্মগোপন করেন। অভিজ্ঞান-শকুন্তলে, এই কথাটা আছে, “আত্মানামাবৃত্য তিষ্ঠতি”। বিদ্যাসাগর মহাশয় এইখানে লিখিয়াছেন— “লতবিতানে ব্যবহিত হইয়া শকুন্তলাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন।” এইখানে অসাবধানতা। শকুন্তলাকে নিরীক্ষণ করিতে হইলে, গৌতমীকেও ত নিরীক্ষণ করা যায়। গৌতমীকে নিরীক্ষণ করান অসঙ্গত। কেননা, এই গৌতমী শকুন্তলার সহিত দুষ্মন্তালয়ে গিয়াছিলেন। অভিশাপ-প্রভাবে রাজা শকুন্তলাকে যেন ভুলিয়া গিয়াছেন, সঙ্গী ঋষিশিষ্যদ্বয় শাঙ্গর্রব ও শারদ্বতকে রাজা কখন দেখেন নাই; সুতরাং রাজা তাঁহাদিগকে যেন চিনিতে পারিলেন না। গৌতমীকে রাজা দেখিয়াছিলেন; তাঁহার সম্বন্ধে তো কোন অভিশাপ ছিল না; রাজা তাঁহাকে না চিনিবেন কিসে? কবি কালিদাস, ভবিষ্যতের এই অসঙ্গতি বুঝিয়া বলিয়া রাখিয়াছিলেন, রাজা আত্মগোপন করিয়াছিলেন; “নিরীক্ষণে"র কথা বলেন নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয় কেন অসাবধান হইলেন, বলিতে পারি না।

 শকুন্তলা যখন দুষ্মন্তপুরে যাইবার উদ্যোগ করেন, তখন তাঁহাকে সজ্জিত করিবার জন্য, কবি কালিদাস দেব-প্রদত্ত অলঙ্কারের সৃষ্টি করিয়াছেন। ঋষিশক্তি বা ব্রাহ্মণ্য-মহিমা বুঝাইবার জন্য কালিদাসের এই সৃষ্টি। বিদ্যাসাগর মহাশয় ইহা পরিত্যাগ করিয়াছেন। হিন্দুস্তানের ইহা আক্ষেপের বিষয় নহে কি?