পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৮
বিদ্যাসাগর।

অকার্য্য করিবার লোক নহেন। ভ্রান্তবিশ্বাস মূলাধার। সারল্য ও কারুণ্যের পরিচয় পদে পদে।

 বাল-বিধবার দুঃখে বিদ্যাসাগর মহাশয় বড় ব্যথিত হইতেন। তাই তিনি বাল্যকাল হইতে বিধবা-বিবাহ-প্রচলনের পক্ষপাতী ছিলেন।

বিধবা-বিবাহ-প্রচলনের প্রবৃত্তি কেন হইল, তৎসম্বন্ধে স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহার স্বগ্রামবাসী স্নেহভাজন শ্রীযুক্ত শশিভূষণ সিংহ মহাশয়কে যাহা বলিয়াছেন, তাহাই এইখানে উদ্ধৃত হইল,—

 “বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের একটী বাল্য-সহচরী ছিল। এই সহচরী তাঁহার কোন প্রতিবেশীর কন্যা। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহাকে বড় ভালবাসিতেন। বালিকাটী বাল্যকালে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট সর্ব্বদা থাকিত। বিদ্যাসাগর মহাশয় যখন কলিকাতায় পড়িতে আসেন, তখন বালিকার বিবাহ হয়; কিন্তু বিবাহের কয়েক মাস পরে তাহার বৈধব্য ঘটে। বালিকাটী বিধবা হইবার পর বিদ্যাসাগর মহাশয় কলেজের ছুটিতে বাড়ীতে গিয়াছিলেন। বাড়ী যাইলে তিনি প্রত্যেক প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে গিয়া জিজ্ঞাসা করিতেন, কে কি খাইল? ইহাই তাঁহার স্বভাব ছিল। এবার গিয়া জানিতে পারিলেন, তাহার বাল্যসহচরী কিছু খায় নাই; সে দিন তাহার একাদশী; বিধবাকে খাইতে নাই। এ কথা শুনিয়া বিদ্যাসাগর কাঁদিয়া ফেলিলেন। সেই দিন হইতে তাঁহার সঙ্কল্প হইল,বিধবার এ দুঃখ মোচন করিব; যদি বাঁচি, তবে যাহা হয়, একটু করিব। তখন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বয়স ১৩।১৪ বৎসর মাত্র হইবে।”