পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৬
বিদ্যাসাগর।

হয় না। যদি বাস্তবিক অসহ্য হয়, অথচ তাহাতে সমাজের উপকার থাকে, তবে তাহা মোচন করিবার আবশ্যক কি? পাঁচ জন বিধবার জন্য যাঁহার প্রাণ কাঁদে, সমাজস্থ সহস্র সহস্র লোকের জন্য তাঁহর হৃদয় ফাটিয়া যাওয়া উচিত। যিনি এক জনের অঙ্গে সূচ ফোটা দেখিতে পারেন না, তিনি শত শত লোকের বলিদান কিরূপে দেখিবেন? যদি পাঁচ জন বিধবার দুঃখ মোচন না করিলে নিষ্ঠুরতা হয়, তবে বিধবা-বিবাহ চালাইয়া সমাজের সহস্র ব্যক্তির অপকার করা চণ্ডলতা-গোরু মেরে জুতা দান ধর্ম্ম নহে। বিধবার যদি দুশ্চরিত্রা হইবার আশঙ্কা থাকে, বিবাহ দিলেও সে আশঙ্কা একেবারে নির্ম্মূল হয় না। অনেক সধবাও দুশ্চরিত্রা হয়। আমরা নরম প্রকৃতির লোক, এই জন্য কেবল দয়া করিতে শিখিয়াছি,—ন্যায়পরতার উগ্র মূর্ত্তি অমিরা সহ্য় করিতে পারি না; সুতরাং ন্যায়ের দিকে দৃষ্টি না রাখিয়া শুদ্ধ অনুভবশক্তির প্রতি লক্ষ্য করিয়া অমিরা মতামত প্রকাশ করিয়া থাকি। ইহাকে স্পেন্‌সার সাহেব Emotional Bias অর্থাৎ আনুভাবিক পক্ষপাত বলিয়াছেন।

 বিচারফলে যাহা হউক, বিধবা-বিবাহের প্রচলন-প্রসঙ্গে একটা তুমুল আন্দোলন উখিত হইয়াছিল। সে আন্দোলন বাত্য়ারিক্ষোভিত বাবিধিবৎ সমগ্র বঙ্গভূমি বিচলিত করিয়া তুলিয়াছিল। ধনী, দরিদ্র, বিদ্বান, মুর্খ, স্ত্রী, বালক, যুবা, বৃদ্ধ, সকলের মুখে দিবারত্র এতৎসম্বন্ধে অবিরাম জল্পনা-কল্পনা চলিয়াছিল। হিন্দুর গৃহে প্রকৃতই একটা বিস্ময়-বিভীষিকার আবির্ভাব হইয়াছিল। পক্ষে বিপক্ষে কত রকম ছড়া, গান রচিত হইয়াছিল, তাহার ইয়ত্তা নাই। পথে, ঘাটে, মাঠে,