পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আচার অনুষ্ঠান।
৩৪৯

জননী বিদ্যাসাগরকে মন্ত্র দিবার প্রস্তাব করেন। বিদ্যাসাগর বিবেচনা করিয়া লইব বলিয়া স্বীকার করেন। একদিন পিতামহী পীড়াপীড়ি করাতে, বিদ্যাসাগর মহাশয় মন্ত্রগ্রহণের একান্ত অব্যাহতি নাই ভাবিয়া পিতামহীকে নানা যুক্তি প্রদর্শন করিবার প্রয়াস পান। মন্ত্রগ্রহণে বিদ্যাসাগরের ইচ্ছা বা মত নাই বুঝিয়া, পিতামহী আর মন্ত্র লইবার কথা বলেন নাই। বেশী বলিলে, পাছে প্রিয়তম পৌত্রের প্রাণে কষ্ট হয় বলিয়া স্নেহ-বাৎসল্য-বিমুগ্ধ বৃদ্ধ পিতামহী ক্ষান্ত হইলেন। এমনই বাৎসল্য মোহ![১]

 প্রসঙ্গক্রমে এইখানে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আচারামুষ্ঠানাদিসম্বন্ধে দুই এক কথা বলি। তিনি তো পিতামহীর নিকট মন্ত্রগ্রহণ করেন নাই; পরস্তু সন্ধ্যাহিক পূজাদিতেও তাঁহার প্রবৃত্তি ছিল না। তবে অপর কাহারও সন্ধ্যাহিক-ক্রিয়া দেখিয়া, তিনি নাসিক সঙ্কুচিত করিতেন না। আপন পরিবারের মধ্যে কাহারও প্রতি তৎসম্বন্ধে তাঁহার নিষেধও ছিল না। ব্রত-স্বস্ত্যয়নাদি ক্রিয়ায় কেহ কথন তাঁহার নিকট বাধা প্রাপ্ত হয় নাই। সন্ধ্যাহ্নিক আচারানুষ্ঠানে বিরত থাকিলেও, হিন্দুর আচার-সন্মত খাদ্যাখাদ্য-সম্বন্ধে তিনি অনেকটা বিচার করিতেন। মুরগী, মদ প্রভৃতি অথাদ্য-ভোজী তাঁহার সৌহার্দ্দসৌভাগ্য লাভ করিলেও, তাঁহাকে নিমন্ত্রণ করিয়া, কখন নিজের বাড়ীতে খাওয়াইতে পারিতেন না। রাজকৃষ্ণ বাবুর মুখে শুনিয়াছি, কোন এক জন শক্তিশালী ব্যক্তি শ্যামাচরণ বাবু ও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বন্ধু ছিলেন। তিনি অখাদ্য খাইতেন বলিয়া, শ্যামাচরণ বাবু ও বিদ্যাসাগর মহাশয়, তাঁহার বাড়ীতে কখন নিমন্ত্রণ খাইতে যাইতেন না।

  1. স্বর্গীয় ডাক্তার অমূল্যচরণ বসু মহাশয়ের মুখে এই বিষয়টী শুনিয়াছিলাম।