পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অমায়িকতা।
৩৬৯

পাদন বোধ হয়, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অভিপ্রেত ছিল না। ভাষা-শিক্ষাকল্পে সীতার বনবাস বাঙ্গালা সাহিত্যের উপাদেয় গদ্য গ্রন্থ। বিদ্যাসাগর মহাশয় চারি দিনে “সীতার বনবাস” লিখিয়া সমাপ্ত করেন। দিবাভাগে নানা কার্য্যে ব্যস্ত থাকায়, তিনি লিখিবার অবসর পাইতেন না। রাত্রি ২॥০ (আড়াইটার) সময় হইতে পর দিন বেলা ১০ (দশটা) পর্য্যন্ত লিখিতেন। একবার লিখিয়া পুনরালোচনা করিবার তাঁহার সময় ছিল না।

 এস্থলে তাঁহার অমায়িকতা, সরলতা ও সদাশয়তার একটী দৃষ্টান্ত দিব। চাকুরীর অবস্থায় বিদ্যাসাগর মহাশয় অবসর পাইলেই বীরসিংহ গ্রামে যাইতেন। স্বাধীন অবস্থায় তাঁহার স্বগ্রামে যাইবার সময় ও সুবিধা অনেকটা হইয়াছিল। তিনি কলিকাতায় থাকিলেও জন্মভূমি বীরসিংহ তাঁহার মনোমধ্যে জাগরুক থাকিত। বীরসিংহ গ্রামে যাইলে পূর্ব্ববৎ তিনি স্বগ্রামস্থ ও নিকটবর্ত্তী গ্রামসমূহের অবস্থাহীন ও অবস্থাপন্ন সকল অধিবাসীর তত্ত্ব লইতেন। আবশ্যক অবস্থাভেদে আকাঙ্খিমাত্রকে প্রকাশ্যে বা অন্য প্রকারে তিনি যথাসাধ্য সাহায্য করিতেন; আগন্তুক অভ্যাগত জনের তিনি সদর-সম্ভাষণে আদর অভ্যর্থনা করিতেন। যিনি যাহাতে সন্তুষ্ট হইতেন, তিনি তাঁহাকে তাহাতে সন্তুষ্ট রাখিতেন। একবার তিনি বাড়ী যাইলে, তাঁহার মাতার মাতুলালয় পাতুল-গ্রামনিবাসী রাঘব রায় নামক একজন বাগ্দী আসিয়া তাঁহাকে সষ্টাঙ্গে প্রণাম করিল এবং প্রণামান্তে উঠিয়া দাঁড়াইয়া তাঁহাকে বলিল,—"কি হে আমাকে চিনতে পার? তোমায় আমায় এক পাঠশালায় লিখিতাম। গুরু মহাশয়ের হাত থেকে তোমায় কতবার বাঁচিয়েচি।” বিদ্যাসাগর মহাশয় পুরাতন সহপাঠী রাঘবকে চিনিতে পারিয়া বলিলেন—