পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গুরুভক্তি।
৩৭১

 একটা গল্প শুনা গিয়াছে। গদাধর পাল নামক এক অতি অমানুষ-বল-বিক্রমশালী যুবক বীরসিংহ গ্রামে বাস করিত। এক বার এই গদাধর গঙ্গাপার হইতে হইতে নৌকা-মজ্জনে জলমগ্ন হয়। গদাধর তখন দুই জন অপর লোককে বগলে পুরিয়া সাঁতার দিতে দিতে নিকটবর্ত্তী একখান ষ্টিমারের নিকট গিয়া উপস্থিত হয়। ষ্টিমারের লোকেরা দড়ি ফেলিয়া অপ্র দুই জন লোককে এক বারে তুলিয়া লয়; কিন্তু গদাধরকে তুলিতে দারুণ কষ্ট হইয়াছিল; এমন কি, প্রথম বার ষ্টিমারর লোকেরা তাহাকে একবার খানিকটা তুলিয়াই ফেলিয়া দিয়াছিল। এই বীর গদাধর কপাটী খেলিতে খেলিতে বিদ্যাসাগরের নিকট জব্দ হইত। সেই বিদ্যাসাগর যৌবনে পুষ্টদেহে মটুক ঘোষকে শূন্য তুলিয়া “দাওয়ায়” বসাইয়া দিলেন। বাল্যের সহৃদয়তা ও বলবত্তা বিদ্যাসাগরের যৌবনেও পূর্ণ মাত্রায় বর্ত্তমান ছিল। বাল্য-যৌবনে দেহ-মনের একধারে এমন শক্তিসম্পন্নতার পূর্ণ বিকাশ বিরল নহে কি?

 বিদ্যাসাগর মহাশয়, যখন বাড়ী যাইতেন, তখন প্রায় তাঁহার সঙ্গে ৫০০।৬০০ (পাঁচ শত কি ছয় শত) টাকা থাকিত। এতদ্ব্যতীত তিনি প্রায় ৪০০ ৫০০ চারি পাঁচ শত টাকার বস্ত্র লইতেন। টাকা ও কাপড় দীনদুঃখীকে বিতরিত হইত। তাঁহার কলিকাতার বাটীতও বিবিধ প্রকারের অনেক টাকার কাপড় মজুত থাকিত। তিনি যথাপাত্রে যথাযোগ্য বস্ত্র বিতরণ করিতেন।

 ১২৬৯ সালে (বা ১৮৬২ খৃষ্টাব্দে) তিনি একবার বীরসিংহ গিয়াছিলেন। এক দিন মধ্যাহ্ন-ভোজন কালে তিনি দেখিলেন, তাঁহার সম্মুখে একটী বর্ষীয়সী রমণী ও একটী যুবতী দাঁড়াইয়া রোদন করিতেছেন। বর্ষীয়সী তাঁহার গুরুমহাশয়ের স্ত্রী এবং