পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭২
বিদ্যাসাগর।

যুবতীটী কন্যা। গুরুমহাশয়ের বহু বিবাহ। তিনি এই স্ত্রী এবং তদীয় কন্যার ভরণপোষণের ভার বহন করিতেন না। তাঁহাদের দুই বেলার অন্ন জুটিত না। বিদ্যাসাগর মহাশয় তখনই গুরুমহাশয়কে ডাকাইয়া স্ত্রী ও কন্যার ভার গ্রহণ করিবার জন্য তাঁহাকে অনুরোধ করেন। গুরুমহাশয় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কথায় সম্মত হয়েন। বিদ্যাসাগর মহাশয় ইতিপূর্ব্বে গুরুমহাশয়কে বীরসিংহ গ্রামের স্কুলের পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তখন তাঁহার স্ত্রী ও কন্যার জন্য তাঁহাকে মাসে মাসে ৪ (চারি টাকা) দিতে স্বীকার করেন। কেবল স্বীকার নহে, তখনই তিনি তিন মাসের অগ্রিম টাকা দিলেন। তিনি তিন মাসের করিয়া অগ্রিম দিবেন বলিয়া প্রতিশ্রুত হয়েন। তাঁহাদের বস্ত্র সরববাহের ভারও বিদ্যাসাগর মহাশয় লইয়াছিলেন; কিন্তু কিছু দিন পর গুরুমহাশয় স্ত্রী ও কন্যাকে তাড়াইয়া দিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় যে কথা শুনিয়া অজস্র অশ্রুপাত করিয়াছিলেন। তিনি গুরুমহাশয়কে যথেষ্ট ভক্তি করিতেন,এই জন্য তাঁহাকে কিছু বলিতে পারেন নাই।

 ১২৬৭ সালের ২২শে মাঘ বা ১৮৬১ খৃষ্টাব্দের ১৬শে ফেব্রুয়ারি কলিকাতার পাইকপাড়াস্থ রাজবংশের অন্যতম বংশধর রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ মানবলীলা সংবরণ করেন। ইনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সম্পূর্ণ গুণগ্রাহী এবং কর্ম্মানুরাগী ছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনুষ্ঠিত সকল কার্য্যেই রাজা রাহাদুরের সবিশেষ সহানুভূতি ছিল। রাজা বাহাদুরের বিয়োগে বিদ্যাসাগর মহাশয় বড়ই কাতর হইয়াছিলেন। রাজা বাহাদুরের মৃত্যু-সময়ে বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহার নিকটে উপস্থিত ছিলেন। পাইকপাড়া রাজবংশ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট নানা কারণে কৃতজ্ঞ।